বাংলা পপ গানের সম্রাট বলা হয় তাঁকে। ব্যান্ডপ্রেমীদের কাছে ছিলেন গুরু। পপগানকে তিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন। বলছি আজম খানের কথা।
তিনি শুধু একজন শিল্পী নন, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে, বাংলা গানের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আজম খান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন তিনি। নীরবে-নিভৃতে কাটছে পপগুরুর জন্মদিন। এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে তেমন কোনো আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর অগণিত গুণগ্রাহী ও ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেছেন।
১৯৫০ সালের এই দিনে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে জন্মেছেন তিনি। তাঁর প্রকৃত নাম মাহবুবুল হক খান। সবাই তাকে ‘গুরু’ বলেই ডাকতেন। কিন্তু গুরু নয়, ‘আজম ভাই’ সম্বোধনটি পছন্দ করতেন আজম খান। তবে সবার ভালোবাসাই তাকে ‘গুরু’ করে তুলেছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি কীর্তি গড়ে গিয়েছেন। ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রশিক্ষণ নিতে হেঁটে আগরতলা চলে যান। সেকশন কমান্ডার হিসেবে আজম খান ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণেও অংশ নেন। আজম খানের বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী ও মা সংগীতশিল্পী। ১৯৭০ সালে ঢাকার টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন আজম খান। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তাঁর লেখাপড়া এগোয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর ‘উচ্চারণ’ নামের একটি ব্যান্ডদলের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন আজম খান।
১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামের গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন তিনি। তাঁর পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তী সময়ে তাঁরই মাধ্যমে আজম খান পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজদের সঙ্গে। একসঙ্গে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান করেন তারা।
আজম খানের প্রথম অ্যালবাম ‘এক যুগ’ অডিও ক্যাসেট আকারে প্রকাশ পায় ১৯৮২ সালে। সব মিলিয়ে তাঁর অডিও ক্যাসেট ও সিডির সংখ্যা ছিল ১৭টি। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে– বাংলাদেশ, আলাল ও দুলাল, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, অভিমানী, আমি যারে চাইরে, হাইকোর্টের মাজারে, এত সুন্দর দুনিয়ায়। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চলতি বছর মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন এ মহান শিল্পী।
১০ গান নিয়ে চাচা আজম খানের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মরণে একটি বিশেষ নিবেদন হাজির করেছেন সংগীত পরিচালক আরমান খান। যিনি সম্পর্কে আজম খানের ভাতিজা আর বিখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খানের পুত্র। স্পেশাল এই ট্রিবিউটের নাম ‘গুরুরে’। জন্মদিনে প্রকাশ হয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। মূলত আজম খানের সৃষ্ট ও গাওয়া কালজয়ী ১০টি গানের নাম দিয়েই গানটি সাজিয়েছেন আরমান। এর পর নিজেই সুর করে গেয়েছেন। আবার গানের ভিডিওতে পারফর্মও করেছেন তিনি। গানটির প্রোগ্রামিং ও সাউন্ড মাস্টারিং করেছেন তুহিন আহমেদ আল আমিন।
ভিডিও নির্মাণ করেছেন রিফাত সৌরভ। ‘গুরুরে’ গানে ব্যবহৃত আজম খানের জনপ্রিয় ১০ গানের নাম হলো– ‘আসি আসি বলে তুমি’, ‘পাপড়ি’, ‘অভিমানী’, ‘আলাল দুলাল’, ‘গানে ভরা মনটা চিরদিনের নয়’, ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘অনামিকা চুপ’, ‘সালেকা মালেকা’ ও ‘হারিয়ে গেছে’।