পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির (প্লাজিয়ারিজম) অভিযোগ তুলেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) মৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন তাঁর সঙ্গে একটি প্রজেক্টে কাজ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন—সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিস হেল্থ ম্যানেজমেন্টের মো. জোবায়ের রহমান, ফিস বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকসের শাইলা আক্তার, প্লান্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজির অনিক বণিক, অ্যাকুয়াটিক রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের রাসেল মিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড ফিস ব্রিডিংয়ের তানজিনা সাউলিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২–২৩ অর্থবছরে গবেষণা করে ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘Length–Weight Relationships (LWRs) of Four Loach Species of the Cobitidae Family from the Surma River, Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন ড. শামীমা নাসরিন। গবেষণাপত্র প্রকাশের উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিন্দাবির জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড ইকথিওলজিতে প্রকাশিত হয়।
এই গবেষণা প্রবন্ধে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মো. জোবায়ের রহমান ও রাসেল মিয়া। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ‘Length–Weight Relationships (LWRs) and Condition factor of four Barbs in the Cyprinidae Family Collected from Atrai River, Bangladesh (ILEC)’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ একটি সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য দেন মো. জোবায়ের রহমান। এরপরই ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনলেন ড. শামীমা নাসরিন।
এ বিষয়ে ড. শামীমা নাসরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার এক সহকর্মীর কাছে একটি গবেষণাপত্র রিভিউ করার জন্য পাঠানো হয়। আমি পেপারটি চেক করে দেখি আমার একটি প্রজেক্টের আন্ডারে আগে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের আইডিয়ার সঙ্গে এই গবেষণাপত্রের কাজ মিলে যাচ্ছে। পাশাপাশি এখানকার পাঁচজন গবেষকের মধ্যে দুইজন (মো. জোবায়ের রহমান ও রাসেল মিয়া) আমার পূর্ববর্তী প্রজেক্টে আমার সুপারভিশনে কাজও করেছে। সেই পেপারটির সঙ্গে এই পেপার অনেকটাই মিলে যায়। তারা তাদের গবেষণা কোন ল্যাবরেটরিতে করেছে সেটারও উল্লেখ করেনি। অথচ কোনো ল্যাবরেটরি ছাড়া গবেষণাই হয় না। তাদের গবেষণার ফান্ডিংয়ে একটা বিশাল গলদও আছে।’
ড. শামীমা আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, তারা সবাই ২০১৯ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপপ্রাপ্ত। ওই সময়টাতেই জোবায়ের ও রাসেল আমার সঙ্গে কাজ করেছিল। তাদের এই গবেষণাটির ডেটাগুলোও যে ম্যানিপুলেটেড (অসৎ উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত), এতেও কোনো সন্দেহ নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষকের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো গবেষণা ঠিক হতে পারে না। তারা বলছে, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নেই। তারা শিক্ষার্থীরা মিলেই এটা করেছে। তারা এমন প্রতারণার আশ্রয় না নিলেও পারত! তারা এখন আবার আমাদের কাছে বারবার মাফও চাচ্ছে। তারা খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা এটা করবে কখনো ভাবি নাই। আশা করা যায়, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং ভবিষ্যতে কেউ আর এ রকম কাজ করবে না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান গবেষক মো. জোবায়ের রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা ভাইয়া, ঠিক হয়ে গেছে। আজকে (বুধবার) দুপুরে সমাধান হয়েছে। আপনি ডিন স্যারকে ফোন দিন। উনি বিস্তারিত আপনাকে খুলে বলবে।’
কী নিয়ে সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে জোবায়ের বলেন, ‘ডিন স্যারকে ফোন দিলে আপনাকে সব বলে দিবেন।’ এই বলেই তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডুর কাছে জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে আমি ইন্ডিয়াতে থাকায় বিষয়টা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারিনি। যেকারণে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারতেছি না। আমি গতকালকে (মঙ্গলবার) আসছি।’
জোবায়ের রহমান বলেছেন, বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। এতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে ডিন ড. মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘না, না। বিষয়টাতো ঠিক বলে নাই তাহলে। আমি সারা দিনই মিটিংয়ে ছিলাম। যার কারণে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।’