রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে নিচতলার চুমুক নামের একটি রেস্তোরাঁ থেকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের পৃথক দুটি সূত্র এই দাবি করেছে। চুমুক নামের রেস্তোরাঁটিতে কফি ও বার্গার বিক্রি হতো।
ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানিয়েছে, নিচতলার চুমুক রেস্টুরেন্টের সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত। সাত তলা ভবনে নিচ তলায় বাম পাশের সিঁড়ির কাছেই ছিল ছোট রেস্তোরাঁটি। সেখানকার সিলিন্ডার থেকে লাগা আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। আগুন সিঁড়ির খুব কাছে থাকায় কেউ বের হতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিসের সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানিয়েছে, ভবনটির মালিকপক্ষ আগুন থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক ‘ফায়ার লাইসেন্সের’ জন্য কোনো আবেদনই করেনি। সাধারণত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই লাইসেন্স দিয়ে থাকে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আব্দুর হালিম বলেন, ‘চুমুক রেস্টুরেন্টের ঠিক ওপরেই কাচ্চি ভাই। প্রথমে আমরা দেখতে পাই ধোঁয়ায় পুরো গ্লাস কালো হয়ে গেছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে আর সেটির তাপ ভেতরে আসছে। তখন রেস্তোরাঁর কর্মীরা সবাইকে বের হতে বলেন। এরপর, সবাই যার যার মতো দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে।’
উল্লেখ্য, গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটি সাততলা। এর নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত পুরোটাই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে নিচতলায় একাধিক কাপড়ের দোকান ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্যের যন্ত্রাংশ বিক্রি হয়। দ্বিতীয় তলা থেকে শুরু করে ওপরের দিকে কাচ্চি ভাই, কেএফসি, পিজ্জা ইনসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিচতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। নিচতলায় লাগা আগুন দ্রুত ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভবনে আটকে পড়ে অনেক মানুষ। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁর কর্মী এবং সেখানে যাওয়া ব্যক্তিরা আগুনের মুখে আটকা পড়ে।
ধারণা করা হচ্ছে, আটকে পড়াদের অনেকে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল। তারাই মূলত সেখানে আটকা পড়ে। এ অবস্থায় ভবনের তৃতীয় ও সপ্তম তলায় আটকে পড়া মানুষ উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকে। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) ব্যবহার করে আটকে পড়াদের নামিয়ে আনার কাজ শুরু করেন। ফায়ারের ১২টি ইউনিট কাজ করে ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ১২টার দিকে ভবনের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত গাড়ি ‘রেফ্রিজারেটেড স্টোরেজ ট্রাক’। এটি মূলত মরদেহ বহনের গাড়ি। এই গাড়িতে করে মরদেহ নেওয়া হয় হাসপাতালে।