রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর মস্কোভা নদীর তীরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি। তাঁর এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও যোগ দিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ‘যুদ্ধ নয়’ কিংবা ‘পুতিন ছাড়া রাশিয়া’—এমন অসংখ্য পুতিনবিরোধী স্লোগানে তাঁরা মুখরিত করে বোরিসোভস্কয় সমাধি এলাকা।
আজ শুক্রবার রাতে বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব মস্কোতে অনুষ্ঠিত নাভালনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তবে তাদের মধ্য থেকে খুব ছোট একটি দলকে গির্জার ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত ওই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়া মানুষদের বেশির ভাগই ছিলেন নাভালনির পিতামাতা সহ নিকটাত্মীয়রা।
এদিকে বিদেশে অবস্থান করায় নাভালনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে পারেননি তার স্ত্রী ইউলিয়া। কর্তৃপক্ষ তাঁকে করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে তিনি রাশিয়ায় ভ্রমণ থেকে বিরত ছিলেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ২৬ বছরের সুখী দাম্পত্যের জন্য স্বামীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষ নাভালনির মৃত্যুতে শোক পালনকারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। যে চার্চে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে তার সামনেই বেশ কিছু ধাতব প্রতিবন্ধকতা দিয়ে বাধার সৃষ্টি করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, নাভালনির শোক সভায় অংশ নিতে যাওয়া অন্তত ৪৫ জনকে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নাভালনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কোনো সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত ছিল রুশ গণমাধ্যমগুলো। তবে নাভালনির দলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিতকা সম্প্রচার করা হয়। সরাসরি যোগ না দিলেও ইউটিউবের সম্প্রচার দেখে অসংখ্য রাশিয়ান এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নাভালনির অসংখ্য ভক্ত অশ্রুসিক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে নাভালনির মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছেন। তবে নাভালনির স্ত্রী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ কিছু পশ্চিমা নেতা নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিনকেই দায়ী করেছেন।
আজ সকালে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনটিতে নাভালনির পরিবারকে বলার মতো কিছুই নেই।’
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল ইয়ামালো-নেনেতের আর্কটিক পেনাল কলোনিতে বন্দী অবস্থায় পুতিন সমালোচক ও বিরোধী দলের নেতা নাভালনির মৃত্যু হয়।