Friday, November 22, 2024
spot_img
Homeশিক্ষাচাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে জড়িত ঢাবির ১০ শিক্ষার্থীকে অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার

চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে জড়িত ঢাবির ১০ শিক্ষার্থীকে অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার

চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকান বসিয়ে চাঁদা নেওয়ায় প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ছয়জনকে শোকজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ মেনে এ সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন।

সিন্ডিকেট সদস্য সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক নারী ও তার ভাইকে এলোপাথাড়ি মারধর ও টাকা ছিনতাই করায় ফলিত গণিত বিভাগের ও ফজলুল হক মুসলিম হলের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মর্তুজা হাসান খান (ফাহিম), মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ এবং সূর্যসেন হল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র মো. রিয়াদ ওরফে রিসাতকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তাদেরকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে এ মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। তাদের নামে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছিল। তারা সবাই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

গত ডিসেম্বরে শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসে রাজধানীর এক কলেজের শিক্ষার্থীকে চেয়ারের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে দশ হাজার টাকা ছিনতাই ও ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে জড়িত থাকায় চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তাদেরকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে এ মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা হয়েছিল।

বহিষ্কারের বিষয়টি তাদের স্থানীয় অভিভাবক ও পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হবে। এ সময়ে তারা হলে অবস্থান করলে হল প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য।

আরেক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে নির্মাণাধীন শতবার্ষিক মনুমেন্ট নিয়ে এক ভিডিও আপলোড করেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আব্দুল ওহেদ। সেখানে অশ্রাব্যভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজন, গণমাধ্যমকর্মীদের গালিগালাজ করায় তাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সময়ে তাকে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে নিয়মিত কাউন্সেলিং নিতে হবে এবং তার মানসিক মূল্যায়ন বিবেচনায় শাস্তি কমানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

পাশাপাশি অ্যানোনিমাস পোস্টের বিষয়ে ফেসবুক গ্রুপটির অ্যাডমিন ও মডারেটরদের প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানান ওই সিন্ডিকেট সদস্য।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে এনে হলে আটকে রেখে নির্যাতন করায় হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় জড়িত তিন শিক্ষার্থী মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মোনতাছির হোসাইন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপসম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ ওরফে তানসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক ফিন্যান্স বিভাগের মোহাম্মদ আবুল হাসান সাঈদিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মেও শোকজ করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রক্টরিয়াল টিমের একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছয়জনকে শোকজ

গত বছর জাতীয় একটি ইংরেজি দৈনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাসমান দোকান বসিয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রক্টর অফিসের টোকেনম্যান মো. শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদা গ্রহণের পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া শামীম হোসেনের সহযোগী কিষান চন্দ্র দাস, অমিত সরকার, শ্রী শুদর্শন হালদার, মো. মাসুম শেখ, মো. রফিক গাজী এবং মো. মিঠু মীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সহযোগিতার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে শোকজ করা হবে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে আরেকটি তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে সমকালকে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জানিয়েছেন।

সার্বিকভাবে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘আমাদের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালো। গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়। অনেকগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক কারণ অন্যতম। নতুন নতুন ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীর বিভিন্নভাবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকজন অসৎ উপায় অবলম্বন করে। এজন্য আমরা বর্তমান প্রশাসন প্রথম দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীকে বৃত্তির আওতায় আনার বিষয়ে কাজ করছি।’

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী। তারা এ ধরনের কাজে জড়াবে না—এটাই আমরা চাই। তারা যেন অসৎ সঙ্গের ফাঁদে না পড়ে। তারা আমাদের সন্তান, যে কোনো সমস্যায় আমাদের জানাবে। ভবিষ্যতে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত ছাত্র হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে সেটাই আমাদের কামনা।’

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments