আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ নারীদের সমঅধিকার, সমসুযোগ ও সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা নীতি, কর্ম কৌশল হিসেবে জাতীয় নারী নীতি-২০১১ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সম অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এত চেষ্টার পরও প্রতিদিনই নারী নির্যাতন আর বঞ্চনার খবর আসে গণমাধ্যমে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২ মতে দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বাল্যবিবাহের ঘটনা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সরকারের হিসাব মতে নারী নির্যাতনের হারও উচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন। নারী নেত্রীবৃন্দ মনে করেন সম্পত্তিতে সমঅধিকার বদলাতে পারে নারী নির্যাতনের দৃশ্যপট।
নারী দিবস যেভাবে: ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কের সূচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১৬ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং ন্যায্য মজুরির জন্য এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্র কারখানায় প্রায় একই দাবিতে দেড় হাজার নারী শ্রমিক আন্দোলন করে আদায় করে নেন আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালনের আহ্বান জানান। জাতিসংঘ ১৯৭৪ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
কর্মসূচি: দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মূল অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থাকবেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি।
দিসবটি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বিকাল ৪টায়। নারীপক্ষ-এর ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী আয়োজন ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’-এর অংশ হিসেবে ধানমন্ডি লেক এলাকার রবীন্দ্র সরোবরে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জাতীয় নারী জোট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বেলা ১১টায় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত নারী শ্রমিক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে বেলা ১১টায় পল্টন মোড় থেকে। ডিসঅ্যাবলড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (ডিডব্লিউএস) ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ডিসঅ্যাবলড ওমেন (এনসিডিডব্লিউ) যৌথ আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠান করবে সকাল ৯টায় মিরপুর-১৪-এর সিআরপি হলরুমে।