Sunday, September 8, 2024
spot_img
Homeবিশ্বগাজায় ‘ত্রাণের বন্যা বইয়ে’ দেওয়ার চেষ্টায় ইসরায়েল

গাজায় ‘ত্রাণের বন্যা বইয়ে’ দেওয়ার চেষ্টায় ইসরায়েল

তীব্রতর মানবিক সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকায় গাজায় ত্রাণের ‘বন্যা’ বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহের জন্য নতুন স্থলপথ খুলে দেওয়ার পর আরও বেশি ত্রাণবাহী গাড়িবহর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ জর্জরিত গাজা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে ব্রাসেলস বলছে, যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলটিতে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাঁধা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবেই স্থলপথগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ‘চলমান লড়াই এবং ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা, ঘন ঘন সীমান্ত বন্ধ এবং প্রবেশ অনুমতিতে সীমাবদ্ধতা’ নিরাপদ এবং কার্যকর ত্রাণ অভিযানকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল হ্যাগারি বলেন, আরও স্থলপথ খুলে দেওয়া হতে পারে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা অঞ্চলটিকে ত্রাণে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ এর আগে আইডিএফ জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ইসরায়েলের কিব্বুটজ বেয়েরির কাছে গাজা সীমান্তের ৯৬তম গেট দিয়ে খাদ্যবাহী ছয়টি লরি প্রবেশ করেছে।

হ্যাগারিকে উদ্ধৃত করে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান ও সমুদ্রপথে খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য এন্ট্রি পয়েন্টগুলো থেকে আরও ত্রাণবাহী গাড়িবহর প্রবেশ করতে দেওয়া করা হবে। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, হামাসের হাতে ত্রাণ পড়ার আশঙ্কায় ইসরায়েল উদ্বিগ্ন থাকায় ত্রাণ সরবরাহে কোনো নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা হবে না। ‘আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি এবং উন্নতি করছি। আমরা বিভিন্ন পরিবর্তন করছি যেন রুটিন তৈরি না করেই আমরা প্রবেশের বিভিন্ন উপায় তৈরি করতে পারি।’

গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ বলছে, দুর্ভিক্ষ থেকে এক কদম দূরে আছে গাজার অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের একভাগ। গাজার উত্তরাঞ্চলে এ সমস্যা বিশেষভাবে তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং বিভিন্ন সংস্থা কয়েক মাস ধরেই ওই অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অঞ্চলটির হাসপাতালগুলোতে অপুষ্টি ও খাবার পানির অভাবে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টিই শিশু।

উত্তর গাজায় সীমিত সংখ্যক যে কয়টি ত্রাণ বহর পৌঁছাতে পেরেছে এর প্রায় সব কটিই ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালোম ও মিসর নিয়ন্ত্রিত রাফাহ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করেছে। এ দুটিই গাজার দক্ষিণে অবস্থিত।

গতকাল বুধবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সংস্থা (ইউএনডব্লিউআরএ) বলে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক কর্মী নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আইডিএফ বলছে, ‘সুনির্দিষ্ট’ হামলায় হামাসের এক কমান্ডার নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি বিমান ও সমুদ্রপথে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বর্তমানে সাইপ্রাস থেকে স্পেনের একটি জাহাজ ২০০ টন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। এরই মধ্যে গাজা উপকূলে একটি জেটি নির্মাণ নিয়ে কাজ করছে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)।

এদিকে জাহাজ ভিড়ার জন্য গাজায় অস্থায়ী পাটাতন নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে একটি মার্কিন সামরিক জাহাজ জেনারেল ফ্র্যাংক এস বেসন মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে অঞ্চলটিতে দৈনিক ২০ লাখ মানুষের খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

তবে দাতব্য সংস্থা ডব্লিউসিকে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ এবং তাদের উদ্যোগ আলাদা।

তবে স্থলপথকে ত্রাণ সরবরাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, সাইপ্রাস–গাজা করিডর স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প হতে পারে না। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাফাহে সামরিক অভিযান চালাবেনই বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments