ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ নিয়ে প্রথম জাহাজ গাজা উপকূলে পৌঁছেছে। এই মুহূর্তে খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে আছে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা গাজার লাখো মানুষ। তাদের জন্য ২০০ টন খাবার নিয়ে স্পেনের একটি জাহাজ সাইপ্রাস থেকে গাজায় পৌঁছেছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে ক্রেন দিয়ে বজরা থেকে খাবার তুলে জেটিতে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে রাখতে দেখা যায়।
বিমান ও সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ কঠিন হওয়ার পর সাগরপথে সরবরাহ কার্যকর কি না, তা দেখার জন্য পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল এটি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অর্থায়নে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এই ত্রাণ সরবরাহ করেছে। এই জাহাজে ছিল চাল, আটা, ডালজাতীয় খাবার, কৌটাজাত সবজি ও কৌটাজাত আমিষ।
গাজায় কার্যকর কোনো বন্দর না থাকায় ডব্লিউসিকের দল উপকূলে একটি জেটি তৈরি করেছে। তবে গাজায় এই খাবার কীভাবে বিতরণ করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা তারকা পাচক হোসে আনন্দ্রেস এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেন, জাহাজ থেকে নামানো সব খাবার ১২টি লরিতে তোলা হয়েছে। পরবর্তী চালানে আরও বেশি সরবরাহ আনা যাবে কি না, তা দেখার জন্য এটি একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা করে দেখিয়েছি!’
এক বিবৃতিতে ইসরায়েল বলে, ওপেন আর্মস জাহাজটি ও এর মধ্যে থাকা মাল সাইপ্রাসে তল্লাশি করে দেখা হয়েছে এবং উপকূলরেখা সুরক্ষিত করতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
শুকনো জমিতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে দলটি রাতভর কাজ করেছে। গত মঙ্গলবার লারনাকা বন্দর থেকে জাহাজটি যাত্রা শুরু করার পর থেকে সারা বিশ্ব এর গন্তব্য নিয়ে উন্মুখ হয়ে ছিল। এই সমুদ্রযাত্রা সফল হলে গাজায় আরও ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আরও ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠানো হবে। জাহাজগুলো সরাসরি এই অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য একটি নতুন সমুদ্রপথ ব্যবহার করবে।
পৃথকভাবে, সমুদ্রপথে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য উপকূলে নিজস্ব ভাসমান ডক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস বলছে, এই ডক নির্মিত হলে গাজায় প্রতিদিন ২০ লাখ মানুষের খাবার পৌঁছানো সম্ভব হবে। ডক নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে একটি সামরিক জাহাজ যাত্রা করলেও এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সামরিক অভিযান ও সামাজিক বিশৃঙ্খলতার কারণে ত্রাণ বিতরণ অসম্ভব হয়ে উঠছে। এদিকে কৃষিজমি ও কলকারখানা সব ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গাজার নিজস্ব খাদ্য উৎপাদনব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়েছে। অঞ্চলটিতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার দ্রুততম ও কার্যকর উপায় হলো স্থলমাধ্যম। তবে ইসরায়েলি প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রয়োজনের এক ক্ষুদ্র অংশ শুধু প্রবেশ করতে পারছে।
ত্রাণবাহী গাড়িবহর বন্দুক হামলা ও লুটতরাজের শিকার হওয়ায় গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্থলপথের বিকল্প হিসেবে উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলার কথা ভাবা হয়। যুক্তরাষ্ট্র জর্ডানের সহযোগিতায় এরই মধ্যে কয়েক দফায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলেছে। এসব ত্রাণের প্যাকেট মাথায় পড়ে অন্তত ৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
জরুরি পদক্ষেপ না নিলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এদিকে, গাজা যুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। ইসরায়েল এই অঞ্চলে ত্রাণের সংকটের মাধ্যমে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইসরায়েল বলছে, গাজায় খাদ্যসংকটের জন্য তারা দায়ী নয়, কারণ তারা দক্ষিণের দুটি ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।