Thursday, September 19, 2024
spot_img
Homeঅর্থনীতিপাবনায় হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের সরবরাহ, দাম নেমে অর্ধেকে

পাবনায় হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের সরবরাহ, দাম নেমে অর্ধেকে

দেশের সর্বোচ্চ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। দেশের মোট পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় উত্তরের এই জেলায়। সম্প্রতি পাবনা সদর, সুজানগর ও সাঁথিয়ার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ হঠাৎ বেড়ে ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। ১০ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরের প্রতিমণ পেঁয়াজ এখন ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা অধিক দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে আনছেন। এতে বাজারগুলোতে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা থাকলেও পেঁয়াজ না আসলেও আমদানির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সিন্ডিকেট তৈরি করায় এই দরপতন ঘটেছে বলে দাবি কৃষকদের।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর একটি হচ্ছে মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ। অপরটি মৌসুমী পেঁয়াজ বা হালিকাটা পেঁয়াজ নামে পরিচিত। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে মৌসুমী হালিকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে পাবনার হাজিরহাটে ভালো মানের পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত ১০ দিন আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে বেড়া উপজেলার চতুরহাটে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। হাটে অতিরিক্ত পেঁয়াজ উঠায় অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

গতকাল সোমবার (১৮ মার্চ) পাবনা সদরের পুষ্পপাড়া হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। গত রোববার আতাইকুলা হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে অনেক কৃষক হতাশ হয়েছেন। লোকসানের শঙ্কায় বিক্রি না করেই পেঁয়াজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

পাবনার হাজিরহাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কৌশিক মন্ডল বলেন, একদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর। অন্যদিকে কৃষকরা জমি থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে আসছে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ উঠেছে। আমরা মানভেদে পেঁয়াজ ক্রয় করি। এগুলো ঢাকার বড় বড় মোকামে দিয়ে থাকি।

পাবনা সদরের দুবলিয়া কামারডাঙ্গার পাইকারি ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন হওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গ্রামাঞ্চল থেকে বা বাজার থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য আমরা পেঁয়াজ দেখে শুনে কিনছি। প্রতিদিন ঢাকায় তিন ট্রাক করে পেঁয়াজ পাঠাতাম, আজকে এক ট্রাকের মতো পাঠাব।

পাবনার বেড়ার চতুরহাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, রমজানের আগে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। কিন্তু রমজান শুরু হতেই হঠাৎ পেঁয়াজের দরপতন শুরু হয়। যেখানে গত ১০ দিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৫০০ থেতে ৩ হাজার ৭০০ টাকা করে আজকে সেই পেঁয়াজ ২ হাজার টাকার নিচে। সকালে একটু বেশি দাম গেলেও সকাল ১০টা নাগাদ একটু দাম কমে যায়। অনেক সময় বাজারে হঠাৎ করেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে পেঁয়াজের দাম কমায়।

এদিকে পেঁয়াজের এই দরপতনে কৃষকের মধ্যে হাতাশা তৈরি হয়েছে। দাম কমের দিকে থাকলে তাদের লোকসান হবে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান দামে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তারা কিছু লাভ পাবেন। তবে পুরোপুরি মৌসুম শুরু হলে দাম আরও কমবে। দাম আরও কমে গেলে তারা লোকসানে পড়বেন।

উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের চড়াডাঙ্গা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আবুল হাশেম জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ থেকে বাজারজাত পর্যন্ত তাদের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ মেলে ৫০ থেকে ৬০ মণ পর্যন্ত। ফলে বাজারে বর্তমান দাম বহাল থাকলেও তারা কিছু লাভ পাবেন। তবে এর চাইতে দাম কমলে লোকসান গুনতে হবে।

সদরের চরপাড়া গ্রামের মোক্তার হোসেন বলেন, এ বছর অধিক দামের আশায় ৫ বিঘা জমিতে হালিকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। প্রথমে এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে। এখন বিক্রি করতেছি ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষিরা অনেক দাম পেলেও  দেশে পেঁয়াজের সংকটের সময় হালিকাটা পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। এভাবে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাজারে পেঁয়াজের একটু বেশি আমদানি হওয়ায় দাম কিছুটা কমছে। বাজারে কিছু ব্যবসায়ীরা অনেক সময় সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে থাকেন। কৃষকরা যেন পেঁয়াজের দাম পান সে বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর  রাখা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments