Sunday, September 8, 2024
spot_img
Homeসারাদেশ১৫ কঙ্কাল চুরি: কালো পোশাকে ৯ মুখোশধারী এসেছিল কবরস্থানে

১৫ কঙ্কাল চুরি: কালো পোশাকে ৯ মুখোশধারী এসেছিল কবরস্থানে

তখন আমি ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাইরে বের হই। ভোরের আলো কেবল ফুটছে, আঁধার কিছুটা ছিল। কিছুদিন আগে আমার ভাই মারা গেছে। তাই কবরস্থানের দিকে যাই। সেখানে কালো পোশাক পরা, মুখ বাঁধা নয়জন মানুষকে কবরস্থান থেকে বের হতে দেখি। তাদের হাতে ও কাঁধে ছিল ব্যাগ।’

এভাবেই আজ মঙ্গলবার ভোরে নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা করছিলেন রেখা খাতুন। তাঁর বাড়ি আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর গ্রামে। তাঁর স্বামীর নাম সেলিম মোল্লা। এদিন দুপুর ১টার দিকে খাস আমিনপুর কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

রেখা খাতুন বলেন, ‘কালো পোশাক পড়া মুখোশধারী নয়জন দুই গ্রুপে প্রথমে তিন জন পরে বাকি ছয়জন কবরস্থান থেকে বের হয়ে চলে যায়। পরে দোয়া দরুদ পড়ে বাড়িতে ফিরে ভাবি, না জানি কালো পোশাক পরা ওই মানুষগুলো কী করছে! পরে সকালে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে জানায় কঙ্কাল চুরির কথা। তখন আমি বলি তাহলে কালো পোশাক পরা ওই লোকগুলো এই কাজ করেছে।’

পাবনা বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে রাতের অন্ধকারে ১৫টি কঙ্কাল চুরি হয়। আজ ভোরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। এরপর থেকেই কবরস্থানে স্বজনেরা ভিড় করতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যে জেলাজুড়ে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।

দুপুরে কবরস্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষের ভিড়। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। কেউবা কবরস্থানে নেমে ঘুরে ঘুরে কঙ্কাল চুরির আলামত দেখছেন। দেখা যায়, কবরগুলোর বাঁশের চাটা তুলে ফেলা হয়েছে। মাটি খোঁড়া হয়েছে। ১৫টি কবরের একই চিত্র।

সেখানে কথা হয় উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল কালাম মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন ব্যাংকে চাকরি করেন। ৪০ দিনের ব্যবধানে তাঁর বাবা–মা মারা যান। সকালে বাজারে এসে তাঁর সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেন কবর খোঁড়া, কঙ্কাল নাই। তখন আমি কবরে গিয়ে সত্যতা পাই। পরে দেখি কবরের ভেতর থেকে মরদেহের মাথা নাই। প্রত্যেকটা কবর থেকে মাথা তুলে নিয়ে গেছে।’

খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সভাপতি বাবুল উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা জানার পরপরই দ্রুত থানায় জানাই। পুলিশ এসে দেখে গেছে। এটার তদন্ত হওয়া উচিত। এ রকম ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কোনো দিন হয়নি। কারা, কী কারণে এটা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

দাঁতিয়া গ্রামের অটোভ্যান চালক সেলিম বিশ্বাস বলেন, ‘ভোরে এই কবরস্থানের পাশ দিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় দেখি অনেক লোকজন। পরে নেমে জানতে পারি কঙ্কাল চুরির ঘটনা। আসলে মানুষের মরেও শান্তি নাই! কবরে গিয়েও তার ওপর অত্যাচার! এটি খুবই দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক ঘটনা।’

চুরি হওয়া এক লাশের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর সঙ্গে বড় কোনো একটি চক্র জড়িত। আমাদের দাবি, পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদ্‌ঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কবর থেকে কঙ্কালগুলো চুরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments