জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন। এসব কলেজ থেকে পাস করা ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট বেতনে চাকরি করছেন। এ ছাড়া ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে আছেন এবং ১৩ দশমিক ২২ শতাংশের বেশি খণ্ডকালীন কাজ করছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ফেলো বদরুন নেসা আহমেদ।
তিনি জানান, বিআইডিএস সম্প্রতি (২০২৩ সাল) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। ওই গবেষণায় তিন বছর আগে পাস করা শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার তিন বছর পরও প্রায় ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট চাকরি পাচ্ছেন না।
যে ২৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বেকার, তাঁরা কোন কোন বিষয়ে পড়েছেন, তা-ও দেখা হয়েছে গবেষণায়। এতে দেখা যায়, যাঁরা বেকার থাকছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিএ (পাস) ডিগ্রিধারী। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা, বাংলা, ইসলামির ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেকারের হার তুলনামূলক বেশি। বিপুলসংখ্যক নারীও বেকার থাকছেন।
গবেষণার তথ্য বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা বেতনে ও মজুরির বিনিময়ে কর্মে নিয়োজিত আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মে নিয়োজিত আছেন। মূলত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষক পদে তাঁরা চাকরি করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেকে তৈরি পোশাক খাতের নিচু পদেও যাচ্ছেন। কৃষি খাতেও যুক্ত আছেন অনেকে।
দেশের উচ্চশিক্ষায় যত শিক্ষার্থী আছেন, তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ কেন এখনো চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না, সেটাও খোঁজা হয়েছিল গবেষণায়।
বদরুন নেসা আহমেদ বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যেটি জানা গেছে তার মধ্যে একটি হলো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে সমসাময়িক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। যার কারণে পাস করেও অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন না। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব সুবিধা পায়, তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। সেসব সুবিধা দেওয়া গেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের হার কমে আসবে।
বিআইডিএসের উদ্যোগে আজ প্রায় সারা দিনই বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা হয়েছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সাব্বির আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।