বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কথা কম বলে মানুষের সেবায় বেশি কাজের মাধ্যমে সবাইকে এগিয়েই আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যতই বক্তৃতা আর স্মৃতিচারণ করি, তার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না যদি না আমরা মানুষের সেবায় কাজ করতে না পারি। স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষের দুরাবস্থার দেখে খুব কষ্ট হয়। তাদের জন্য কিছু করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হবে।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন গ্রামগঞ্জে সব জায়গাতে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দাও। কিন্তু আমি যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যাই, মানুষের দুরবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয়। এই জায়গাগুলো যদি আমরা ঠিক করতে না পারি, তাহলে কখনোই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার প্রতিমন্ত্রী দুজনেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, ঈদের পর আবারো এই কার্যক্রম শুরু করব। আমি চাচ্ছি একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামেগঞ্জে গিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দিতে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমরা তাই করবো।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেজন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মত করে সাজানোর সুযোগ পাননি। তিনি মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোন সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি। স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগগুলো জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সেলক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৩ বছরের ত্যাগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কত দিন তিনি খেয়ে না খেয়ে দেশের মানুষকে একত্রিত করতে কাজ করেছেন তার হিসাব নেই। বিশ্বের অনেক দেশই স্বাধীনতার জন্য যুগের পর যুগ লড়াই করে যাচ্ছে, কিন্তু স্বাধীন হতে পারছে না। বাংলাদেশ কীভাবে পারলো, ভারত কীভাবে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতে ঝাপিয়ে পড়লো! এগুলো তো আর এমনি এমনি হয়নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাহস ছিল, বুকের পাটা বড় ছিল। এজন্যই বাংলাদেশ এত আগে স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মত সাহসী নেতা নেই বলেই অনেক দেশ স্বাধীন হতে পারছে না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব) সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবর্গ।