সিনেমার নাম ‘আহারে জীবন’। ছটকু আহমেদের পরিচালনা। ফেরদৌস-পূর্ণিমার অভিনয়। ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এক ডজনের বেশি সিনেমার তালিকায় আহারে জীবনও রয়েছে। পরিচালক ছটকু আহমেদ বরাবরই সামাজিক নানা বিষয় তুলে আনেন তাঁর সিনেমায়। বিনোদনের মিশেলে তাতে থাকে জীবনবাস্তবতার ছোঁয়া। ঠিক এখানেই ঈদের অন্য সিনেমাগুলোর চেয়ে আহারে জীবন অনেকটা আলাদা। সিনেমাটির গল্পে উঠে এসেছে করোনাকালীন দিনগুলোর চিত্র। সেই সময়ের অসহায়ত্ব, মানবিকতা আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা।
সিনেমাটির মুক্তি উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ফিল্ম আর্কাইভে আয়োজন করা হয় ট্রেলার ও পোস্টার প্রকাশ অনুষ্ঠানের। সেখানে পূর্ণিমা না থাকতে পারলেও এসেছিলেন ফেরদৌস, পরিচালক ছটকু আহমেদ, মসিহউদ্দিন শাকের, জাকির হোসেন রাজু, শাহীন সুমন, প্রযোজক হাবিবুর রহমান খানসহ অনেকে। আহারে জীবন সম্পর্কে ছটকু আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি জীবনঘনিষ্ঠ সিনেমা। করোনার সময়ের একটি ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছিল বৈশ্বিক মহামারি করোনা। সেই সময়ের ঘটনা উঠে এসেছে এ সিনেমায়।’
মঞ্চে ছটকু আহমেদের পাশে বসেছিলেন ফেরদৌস। কালো পাঞ্জাবি, কোট, মাথায় কালো টুপি। সংসদ সদস্য হওয়ার পর রাজনৈতিক মঞ্চেই এখন তাঁকে বেশি দেখা যায়। অনেক দিন পর নিজের সিনেমার কোনো অনুষ্ঠানে এসেছিলেন গতকাল। তাই ঈদের সিনেমা নিয়ে স্মৃতিচারণা করে ফেরদৌস বলেন, ‘ঈদের আনন্দের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে সিনেমা। আমরা ছোটবেলায় ঈদি জমাতাম। সেই টাকা দিয়ে ঈদের সিনেমা দেখতে যেতাম। দুই ঈদের সঙ্গে চলচ্চিত্রের একটা বিরাট মেলবন্ধন। ঈদের সিনেমা নিয়ে সবারই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। কয়টা সিনেমা রিলিজ হবে, কার সিনেমা এগিয়ে থাকবে, কে কয়টা হল পাবে—এ ধরনের একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। আমি যখন চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত হলাম, তখন থেকে এমনটা দেখে আসছি। নরমালি এক সপ্তাহে দুটো সিনেমা রিলিজ হওয়ার কথা, ঈদ এলে কখনো কখনো সেটা আটটা-দশটা হয়ে যায়। এবার ঈদেও বেশ কয়েকটি সিনেমা রিলিজ হবে। সব সিনেমার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।’
শুধু নিজের সিনেমা নয়, ফেরদৌস চান দর্শক ঈদের প্রতিটি সিনেমা দেখুক। তিনি বলেন, ‘আমি চাই প্রতিটি সিনেমা চলুক। আজকাল প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ হয়ে গেছে। মানুষের সিনেমা দেখার জায়গাও বদলে গেছে। তারপরও আমার মনে হয়, হলে গিয়ে একটা ভালো সিনেমা দেখার যে আনন্দ, সেটাই হচ্ছে প্রকৃত বিনোদন।’
আহারে জীবন সরকারি অনুদানের সিনেমা হলেও এতে বিনোদনের উপাদানের কমতি নেই বলে জানালেন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘অনুদানের সিনেমাকে আমরা সিনেমার কিছু মানুষ এমন জায়গায় নিয়ে গেছি যে, অনুদানের সিনেমা লেখা দেখলে মানুষ আর হলে যেতে চায় না। তাদের একটা ধারণা হয়ে গেছে, অনুদানের সিনেমা মানেই ধীরগতির, তার মধ্যে কিছু জীবনের কথা থাকবে, কিন্তু আনন্দ বিনোদন থাকবে না। সেই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্যই আহারে জীবন। এ সিনেমায় সব ধরনের বিনোদন আছে, জীবনঘনিষ্ঠ বার্তাও আছে। জীবনের জয়গানের কথা আছে। জীবনের গল্প আছে।’ সিনেমাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানোর চেষ্টা করবেন বলে জানান ফেরদৌস।
পূর্ণিমা জানিয়েছেন, আহারে জীবন সিনেমার মাধ্যমে ছটকু আহমেদের পরিচালনায় প্রথম অভিনয় করেছেন তিনি। ফলে এটি ঘিরে তাঁর প্রত্যাশা অনেক। পূর্ণিমা বলেন, ‘অনেক দিন নিয়মিত অভিনয় করছি না। ঈদে আমার একটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, এটি অবশ্যই আমার জন্য খুশির খবর। করোনাকালের গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমাটি ভালো একটি কাজ হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শকেরা একটা ভিন্ন, পরিচ্ছন্ন গল্পের সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন।’