Saturday, November 9, 2024
spot_img
Homeজাতীয়রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশের

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশের

বিলম্বিত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদ আয়োজিত এক উন্মুক্ত বৈঠকে এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে উন্মুক্ত বৈঠকটি হয়।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, রাখাইনে সাম্প্রতিককালে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যহত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

প্রত্যাবাসন ইস্যুতে প্রকৃত রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রদর্শন ও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া রাষ্ট্রদূত রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনকারীদের সফলভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ এবং আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।

রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন জাতিসংঘের রাজনৈতিক এবং শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালিদ খিয়ারি এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের পরিচালক লিসা ডাউটন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ছাড়াও সভায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ এর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা জরুরি যা মূলত মিয়ানমারের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিহিত।

মুহিত বলেন, এই অন্তর্নিহিত সমস্যাসমূহের সমাধান করা না গেলে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাসমূহের সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

রাষ্ট্রদূত মুহিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের উপস্থিতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা, এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ বাস্তবায়নের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রাখাইনে সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত চুক্তি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দেন।

তিনি মিয়ানমারের অন্য সকল জাতিগোষ্ঠীর মত রোহিঙ্গারাও যেন সমাজে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন সে লক্ষ্যে উপযুক্ত এবং টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যথাযথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত। তিনি, রাখাইন পরিস্থিতির প্রতি নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই সমাধানে দ্রুত ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।

সভায় বক্তব্য প্রদানকারী অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ মিয়ানমারে সম্প্রতি সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে রাখাইন সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবং সকল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

বক্তারা নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ ও আসিয়ানের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।

দশ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক নেতৃত্বের নিদর্শন রেখে যাচ্ছে, বক্তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সকলকে আহ্বান জানান।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments