আসন্ন ঈদে মুক্তি পেতে চলেছে ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ সিনেমা। ইতোমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে ছবির তিনটি গান। যার সবশেষ সংযোজন হিসেবে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় প্রকাশ পেয়েছে ‘আমি একাই রাজকুমার’ গানটি।
‘আমি একাই রাজকুমার’ গানটি লিখেছেন ফেরারি ফরহাদ। গেয়েছেন শামীম হাসান। সংগীতায়োজনে ছিলেন ইমন চৌধুরী। কোরিওগ্রাফি করেছেন অশোক রাজা।
এই গানে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপে দেখা গেছে শাকিব খানকে। বিশেষ করে নায়কের কস্টিউমে ছিল যাত্রাপালার রাজকুমার চরিত্রের আবহ! যেখানেই আপত্তি তুলেছেন শাকিব ভক্তরা। পছন্দের নায়ককে কোনোভাবেই এই পোশাকে মেনে নিতে পারেননি তারা।
‘আমি একাই রাজকুমার’ গানটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শাকিবিয়ানদের। তাদের দাবি= গানের পোশাক, কথা, সুর…কোনোকিছুই শাকিব খানের সঙ্গে যাচ্ছে না। বরং গান নিয়ে যেই প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাসের কথা শুনিয়েছিলেন নির্মাতা ও লেখক সেইসবই ‘বুমেরাং’-এ পরিণত হয়েছে।
তিন মিনিট ৭ সেকেন্ডের গানের ভিডিওতে দেখা গেছে পুরোপুরি চিল মুডে ড্যান্স করছেন শাকিব খান। তার সঙ্গে শতাধিক ড্যান্সার তাল মেলাচ্ছেন। এফডিসিতে চিত্রায়িত গানের সেটেও দেখা গেছে রুচিহীনতার ছাপ। গানের কথায় দেশপ্রেম ও সাম্যের বাণী থাকলেও ছিল না পরিপক্কতা। বাহারি রঙের পোশাকের সাজে গানের তালে নায়ক বলছেন, মনের দেশের সবাই রাজা আমি একাই রাজকুমার।
‘আমি একাই রাজকুমার’ গানের সমালোচনা করে ‘সিনেগল্প’র ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, একটা গানের কথা খারাপ হতে পারে, সুর খারাপ হতে পারে, সঙ্গীতায়োজন বা গায়কীও খারাপ হতে পারে। কিন্তু বিগ বাজেটের একটা সিনেমায় নায়কের ঠোঁটের সঙ্গে গানের লাইন মিলবে না- এমন অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটবে? এটা তো খামখেয়ালিপনা ছাড়া কিছুই নয়! দর্শককে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নিলেই এরকমটা হয়।
লাকিব হোসেন নামের এক শাকিব ভক্ত লিখেছেন, হিমেল আশরাফ বলেছিলেন রাজকুমারের গানগুলো প্রিয়তমাকে ছাড়িয়ে যাবে। কতটুকু ছাড়িয়ে গেছে সেটা দেখতেই পাচ্ছি। গানের কি বাজে লিরিক্স। শুনলাম, গানের বাজেট ২০ লাখ টাকা। হিমেল মনে হয়, প্রযোজকের অর্ধেক টাকা তার পকেটে ঢুকিয়েছে। শাকিব খানের পাঙ্কু জামাইয়ের গানের পর সবচেয়ে বাজে গান এটা। শাকিব খানকে রীতিমতো ‘জোকার’ বানিয়ে ছেড়েছেন হিমেল।
তাসকিয়া মেহজাবীন নামে একজন লিখেছেন, শাকিব খান যা কিছুই বানায় আমরা সবসময় ওনার পাশে থাকি। তাই বলে এই না, যা মনে আসবে তাই বানিয়ে শাকিবিয়ানদের ছোট করবেন। আজকে যেই গানটা প্রকাশ করেছেন হিমেল আশরাফ, সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটা অখাদ্য। হজম করার মতো না। সিনেমা হলে এই গানটা চালানোর দরকার নেই, হজম করতে পারব না। এটা কি ধরনের লিরিক্স? আর এটা কি এডিট? লিপসিং এর কোনো মিল নেই।
ফেসবুকে শাকিবভক্তদের একজন জানিয়েছেন, গানটি প্রকাশের পর তিনি সিনেমাটি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তার কথায়, রাজকুমার সিনেমা দেখার জন্য যতটাই আগ্রহে ছিলাম, এখন ততটাই অনুৎসাহী। এত জঘন্য লিরিক, ফালতু গায়কি, ফালতু এডিটিং, ফালতু কস্টিউমে নির্মিত গান কীভাবে একটা সিনেমায় যুক্ত হতে পারে? এসব জঘন্য লিরিকে কখনও কোনো ডান্স নাম্বার হতে পারে না। শাকিব খানই কীভাবে এসব জঘন্য লিরিকের গানে পারফর্ম করল! ২৫ বছর পরও লোকটা ভালো মন্দ তফাতটা বুঝলো না।
অন্য এক ভক্ত ছবির পরিচালক হিমেল আশরাফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, পরিচালক হিমেল আশরাফের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনতিবিলম্বে শাকিবিয়ানদের কাছে ক্ষমা চান। আমাদের প্রাণপ্রিয় সুপারস্টারকে আপনি এভাবে জোকার বানাতে পারেন না।
একজন তো রীতিমতো গীতিকার ফেরারি ফরহাদকে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, আপনি একটা সি-গ্রেড লেখক, এই গান তার প্রমাণ। এরপর শাকিব খানের কোনো কাজে যেন আপনাকে না দেখি।
জাহিদুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি একাই রাজকুমার’ শুনার পর মনে হচ্ছে হিমেল আশরাফ শাকিবকে আবারো ২০১২-১৩ সালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। হেটার্সদের ট্রলের আগুনে ঘি এর মতো কাজ করবে এই গান। আবার লিখছেন, ‘ডেডিকেটেড টু শাকিবিয়ান’। মানে একটা সিনেমা কোনোরকমে হিট করে সে শাকিবিয়ানদের যা তা খাওয়ায় দিবে এটা ভেবেছে মনে হয়। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুও মনে হয় আরও ভালো গান বানাতে পারতো!
এর আগে ছবিটির আরও দুটি গান প্রকাশ হয়। প্রেমময় ‘রাজকুমার’ আর বিরহী ঘরানার ‘বরবাদ’। গান দুটি থেকেও মিলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে ‘আমি একাই রাজকুমার’ গানে নেতিবাচক মন্তব্যেই ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
‘রাজকুমার’ পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ। গেল বছরের ব্লকবাস্টার হিট ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। নতুন ছবিতে শাকিবের নায়িকা যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টনি কফি। প্রযোজনায় ভার্সেটাইল মিডিয়া। ঈদের দিন থেকে দেশজুড়ে সর্বাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলবে ছবিটি।