ঈদ মানেই নতুন সিনেমা মুক্তির হিড়িক। হল সংকটের এই সময়েও দুই ঈদে সিনেমা মুক্তি দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নির্মাতা-প্রযোজকেরা। এ বছর রোজার ঈদে মুক্তির জন্য প্রস্তুত ১৩টি সিনেমা। সিনেমা মুক্তির সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেও হল নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটেনি এখনো।
আলোচনায় এগিয়ে শাকিব ও রাজ
ঈদের সিনেমার আলোচনায় এগিয়ে রয়েছে শাকিব খান ও শরিফুল রাজ। গত বছর হিমেল আশরাফের পরিচালনায় ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন শাকিব খান। এবার একই পরিচালকের ‘রাজকুমার’ সিনেমায় দেখা যাবে তাঁকে। তবে সিনেমার গানগুলো তেমন আলোচনা সৃষ্টি করতে পারেনি যেমনটা হয়েছিল প্রিয়তমার বেলায়। বিশেষ করে ‘আমি একাই রাজকুমার’ গানটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রায় দেড় বছর পর নতুন সিনেমা নিয়ে আসছেন শরিফুল রাজ। ঈদে একটি নয়, তিনটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে তাঁর। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর’ ও মিশুক মনি পরিচালিত ‘দেয়ালের দেশ’। গান, টিজার ও ট্রেলার প্রকাশের পর প্রশংসিত হচ্ছে সিনেমা তিনটি।
প্রচারণার হাতিয়ার এখন সোশ্যাল মিডিয়া
একসময় সিনেমা মুক্তির আগে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হতো, টিভি ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হতো, মাইকিং করতে দেখা যেত। সময়ের সঙ্গে প্রচারণায় এসেছে ভিন্নতা। প্রচারণায় সবাই এখন মনোযোগী সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে। সেখানেই সিনেমার গান, টিজার ও ট্রেলার রিলিজ হচ্ছে। অভিনয়শিল্পীরা তাঁদের ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইলে শেয়ার দিয়ে হলে দর্শকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। অনেক তারকা আবার ভিডিও বার্তায় শুভকামনা জানাচ্ছেন। এদিকে এগিয়ে আছে মোস্তফা কামাল রাজের ওমর। এই সিনেমাকে শুভকামনা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ৯১ জন তারকা।
হল নিয়ে শঙ্কা
২০০৯ সালের এক ঈদে ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। তখনো দেশে হল ছিল প্রায় পাঁচ শ। এরপর থেকেই পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে হলের সংখ্যা। এখন দেশে নিয়মিত সিঙ্গেল স্ক্রিন চালু রয়েছে ৬০টির মতো। ঈদের সময় এই তালিকা বেড়ে হয় ১৫০ থেকে ১৬০টির মতো। সঙ্গে আছে মাল্টিপ্লেক্সে ৩৫টি হল। এই অবস্থায় এক ঈদে ১৩টি সিনেমা মুক্তি দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মনে করছেন সিনেমাসংশ্লিষ্টরা। ঈদের আর দুই দিন বাকি থাকলেও এখনো হল সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পারেনি বেশির ভাগ সিনেমা। অনেকেই মনে করছেন শেষের দিকে এসে ছিটকে যেতে পারে মুক্তির তালিকায় থাকা একাধিক সিনেমা। হল নিয়ে শঙ্কা থাকলেও প্রচারণায় থেমে নেই সিনেমার কলাকুশলীরা। হলের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তাঁরা। এখন দেখার বিষয়, শঙ্কা কাটিয়ে মুক্তির তালিকায় থাকা সিনেমাগুলো আলোর মুখ দেখে কি না।
মুক্তির তালিকায় থাকা ১৩ সিনেমা
রাজকুমার
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: হিমেল আশরাফ
অভিনয়ে: শাকিব খান, কোর্টনি কফি, তারিক আনাম খান
প্রযোজনা: আরশাদ আদনান
গল্প: প্রেম, পারিবারিক সম্পর্ক আর স্বপ্নবাজ এক তরুণের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজকুমার।
কাজলরেখা
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: গিয়াস উদ্দিন সেলিম
অভিনয়ে: শরিফুল রাজ, মন্দিরা চক্রবর্তী, রাফিয়াত রশীদ মিথিলা, ইরেশ যাকের প্রমুখ
প্রযোজনা: সরকারি অনুদানে নির্মিত
গল্প: কিশোরী কাজলরেখাকে বনবাসে পাঠায় তার বাবা। সেখানে সুচরাজার জীবন বাঁচায় কাজলরেখা। তাকে বিয়ে করতে চায় সুচরাজা। কিন্তু পরচিয় গোপন করে সুচরাজাকে বিয়ে করে কঙ্কনদাসী।
দেয়ালের দেশ
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: মিশুক মনি
অভিনয়ে: শরিফুল রাজ, শবনম বুবলী, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা প্রমুখ
প্রযোজনা: সরকারি অনুদানে নির্মিত
গল্প: নিম্নশ্রেণির দুজন মানুষ রাজ ও বুবলীর মধ্যে প্রেম হয়। হঠাৎ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বুবলী। এরপর তার লাশ নিয়েই বসবাস শুরু করে রাজ।
ওমর
চিত্রনাট্য: সিদ্দিক আহমেদ
পরিচালনা: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
অভিনয়ে: শরিফুল রাজ, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, নাসির উদ্দীন খান প্রমুখ
প্রযোজনা: খোরশেদ আলম
গল্প: লন্ডন থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে আসে ছোট মির্জার বন্ধু রাজ। হঠাৎ খুন হয় ছোট মির্জা। সেই খুনকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে রাজ ও নাসির উদ্দীন। অন্যদিকে ভাইকে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে বড় মির্জা চরিত্রের শহীদুজ্জামান সেলিম।
মায়া- দ্য লাভ
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: জসিম উদ্দিন জাকির
অভিনয়ে: আনিসুর রহমান মিলন, সাইমন সাদিক, বুবলী, রোশান প্রমুখ।
প্রযোজনা: আলীনুর আসিক ভূঁইয়া
গল্প: রোশান ও বুবলী একে অপরকে ভালোবাসে। তাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মাহমুদুল হাসান মিঠু। এদিকে বুবলীকে মনে মনে ভালোবাসে সাইমন। বুবলীর জন্য সব করতে প্রস্তুত সে। অন্যদিকে, নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ছেড়ে বুবলীর টানে চলে আসে মিলন।
লিপস্টিক
চিত্রনাট্য: আব্দুল্লাহ্ জহির বাবু
পরিচালনা: কামরুজ্জামান রোমান
অভিনয়ে: আদর আজাদ, পূজা চেরি প্রমুখ
প্রযোজনা: স্মার্ট মাল্টিমিডিয়া
গল্প: গ্রামের কিশোরী বুচির চোখেমুখে নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন। বুচির নায়িকা হওয়ার জার্নি নিয়েই তৈরি হয়েছে লিপস্টিক।
সোনার চর
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: জাহিদ হোসেন
অভিনয়ে: মৌসুমী, ওমর সানী, জায়েদ খান, স্নিগ্ধা প্রমুখ।
প্রযোজনা: জাহাঙ্গীর শিকদার
গল্প: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার সময়ের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি।
মেঘনা কন্যা
চিত্রনাট্য: ফাহমিদুর রহমান ও আহমেদ খান হীরক
পরিচালনা: ফুয়াদ চৌধুরী
অভিনয়ে: ফজলুর রহমান বাবু, কাজী নওশাবা, সাজ্জাদ হোসেন, সেমন্তী সৌমি প্রমুখ।
প্রযোজনা: আজাদ ফিল্মস এবং এস জে মোশনস পিকচার্স
গল্প: নারী পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম ও শহরের দুই নারীর শিকল ভাঙার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি।
আহারে জীবন
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ছটকু আহমেদ
অভিনয়ে: ফেরদৌস আহমেদ, পূর্ণিমা, জয় চৌধুরী, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
প্রযোজনা: সরকারি অনুদানে নির্মিত
গল্প: করোনাকালীন সময়ের অসহায়ত্ব, মানবিকতা আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের নানা গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি।
পটু
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: আহমেদ হুমায়ুন
অভিনয়ে: ইভান সাইর, আফরা শাইয়ারা, শোয়েব মনির, দিলরুবা হোসেন মুখ।
প্রযোজনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া
গল্প: রাজশাহীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জীবনাচরণের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমার চিত্রনাট্য।
মোনা: জ্বীন ২
পরিচালনা: কামরুজ্জামান রোমান
অভিনয়ে: তারিক আনাম খান, আহমেদ রুবেল, সুপ্রভাত ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।
প্রযোজনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া
গল্প: জিনের উৎপাতে বাড়ির মালিক নিজ বাড়ি ছেড়ে মাদ্রাসা ভাড়া দেয়। কিন্তু মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক জিনের উৎপাতে সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়। জিন কেন উৎপাত করছে? সেই রহস্য নিয়েই নিয়েই মোনা সিনেমার গল্প।
ডেডবডি
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: মোহাম্মদ ইকবাল
অভিনয়ে: ওমর সানী, রোশান, শ্যামল মাওলা, অন্বেষা রায় প্রমুখ।
প্রযোজনা: মোহাম্মদ ইকবাল
গল্প: ঘুমালেই স্বপ্নে পচা-গলা লাশ দেখতে পায় শ্যামল মাওলা। একসময় তাদের বশে চলে যায় সে। আক্রমণ করতে শুরু করে নারীদের। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা শ্যামলকে ঠেকাতে এগিয়ে আসে ওমর সানী ও জিয়াউল রোশান।
গ্রীন কার্ড
পরিচালনা: কাজী হায়াত ও রওশন আরা নিপা।
অভিনয়ে: কাজী মারুফ, নুসরাত তিসা, নাজিদা সৈয়দ প্রমুখ।
প্রযোজনা: কাজী মারুফ
গল্প: উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো এক ছেলে কাজী মারুফ। সেখানে স্থায়ী হওয়ার গ্রিন কার্ডের প্রয়োজন। সেই কার্ড পাওয়া কতটা কঠিন এবং কার্ড না পেলে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা দেখা যাবে এ সিনেমায়।