Monday, November 25, 2024
spot_img
Homeসারাদেশথানায় মীমাংসা: যারা ভেঙেছে তারাই বানিয়ে দেবে লালনভক্ত বৃদ্ধার ঘর

থানায় মীমাংসা: যারা ভেঙেছে তারাই বানিয়ে দেবে লালনভক্ত বৃদ্ধার ঘর

৮০ বছর বয়সী চায়না বেগমের ইচ্ছা ছিল, লালন অনুসারী মৃত স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন। ভিটেমাটিতে প্রতিদিন জ্বালাবেন সন্ধ্যাপ্রদীপ। লালন অনুসারী চায়না বেগম স্বামীর কবরের পাশেই নিজ জমিতে তুলেছিলেন টিনের চালার ঘর। কিন্তু অনৈসলামিক ঘোষণা দিয়ে সেই ঘর ভেঙে দিয়েছেন স্থানীয় মেম্বার ও মাতবরেরা। দিশেহারা বৃদ্ধা প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো লাঞ্ছিত হয়েছেন। কূলকিনারা করতে না পেরে অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া মডেল থানায়।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় বৈঠকে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। চায়না বেগমকে অন্যত্র একটি নতুন ঘর করে দেওয়ার শর্তে মীমাংসা হয়েছে।

এর আগে ২৬ জুন (বুধবার) সকাল ৬টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের টাকিমারা এলাকায় চায়না বেগমের ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়।

এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চায়না বেগম ও তাঁর স্বামী মৃত গাজির উদ্দিন লালন ফকিরের অনুসারী। মৃত্যুর পর গাজির উদ্দিনকে মাঠের মধ্যে নিজ জমিতে কবর দেওয়া হয়।

চায়না বেগমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘স্বামী মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, কোথাও জায়গা না হলে আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতিবছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। স্বামীর কথা রাখতেই ঘরখানা তৈয়ার করি।’

ঘর ভাঙার আগে এলাকাবাসী কিছু জানিয়েছিল কি না জানতে চাইলে চায়না বেগম বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই সব ভেঙে ফেলেছে।’

কী ঘটেছিল সেদিন
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন ভোরে ফজরের নামাজ শেষে ইমাম আলোচনায় বলেন, মাজার ইসলাম পরিপন্থী। এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার এনামুল হক, মাতবর মোশারফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের ইন্ধনে এই আলোচনা হয়। এরপরেই সাবেক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি লালন অনুসারী ওই বৃদ্ধার ঘর ভাঙচুর করে।

থানায় লিখিত অভিযোগে কী ছিল
চায়না বেগম এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার এনামুল হক, মাতবর মোশারফ হোসেন, আনার মণ্ডল ও সাইদুল হাজির নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনেন। জমি দখলের চেষ্টার কথাও বলেন তিনি।

থানায় মীমাংসা
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানার এসআই খায়রুজ্জামান জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। সেখানে চায়না বেগম ও তাঁর বোনের স্বামী সাধু শাহাবুদ্দিন সাবুসহ স্থানীয় কাউন্সিলর, মাতব্বর ও অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিলেন। চায়না বেগমের অনুমতি সাপেক্ষে এবং সবার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমির পাশেই চায়না বেগমের ছেলে মজিবুর রহমানের ভিটা রয়েছে। সেই ভিটায় চায়না বেগমের জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। নির্মাণ খরচ বহন করবেন অভিযুক্তরা।

সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পৌর কাউন্সিলর এজাজ আহমেদ। তিনি  বলেন, ওসির উপস্থিতিতে সবাই একমত পোষণ করেন, যেখানে চায়না বেগমের ঘর ছিল, সেই স্থান জনশূন্য, মাদকের আস্তানা এবং কিশোর গ্যাংয়ের আনাগোনা। তাই সেখানে বৃদ্ধার একলা থাকা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে পাশে ছেলের জমিতে ঘর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যা বলছেন অভিযুক্তরা
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ওই বৃদ্ধা বাড়ি করেছেন একটি মাঠের মধ্যে, ফাঁকা জায়গায়। সেখানে যাওয়ার পথ নেই, তাঁকে দেখারও কেউ নেই। এ ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা হওয়ার আশঙ্কায় তাঁর ঘরটি এলাকাবাসী ভেঙে দিয়েছে।

মীমাংসার পর মোবাইল ফোনে কথা হয় চায়না বেগমের সঙ্গে। বয়সের ভারে কথা স্পষ্ট বলতে পারেন না। তাঁকে মীমাংসা করতে চাপ দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্মতি দিয়েছিলাম।’ স্বামীর কবরের পাশে থাকতে পারবেন না, এ নিয়ে আক্ষেপ হচ্ছে কি না—এ প্রশ্নে নীরব ছিলেন চায়না বেগম।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments