সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল ও এ সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে রাজধানীতে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কে ‘গণ পদযাত্রা’ করে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘গণ পদযাত্রা’ নিয়ে নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজ, সায়েন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল, কাঁটাবন মোড় হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বন্ধ থাকা গ্রন্থাগার খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজ এবং রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ছাত্রসমাজ গড়বে দেশ, মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আগামী ৩ ও ৪ জুলাই দুপুর আড়াইটায় সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে বলছি না। আমরা পোষ্য কোটাসহ সকল অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে বলছি। মনে রাখতে হবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো গোষ্ঠী বা বংশ পরম্পরাদের জিনিস নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ। সারা বাংলাদেশের নাগরিক তরুণরা আমরা সেই আদর্শ ধারণ করি। সেই আদর্শ ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধারা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল আমরা সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আবার আন্দোলন শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে। এরপরই আমরা অন্যান্য সংস্কারের ব্যাপারে বিবেচনা করব। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, এটা রাষ্ট্রের বিষয়। এটা সবার আন্দোলন, মেধাভিত্তিক নিয়োগ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, আমি মনে করি নারী কোটা রেখে নারীদের ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমি বলব নারীরা বেরিয়ে আসুন। ২০২৪ সালে ‘আমি নারী’ এটা কোনো দুর্বলতা নয়। নারী আমার বড় পরিচয়। আমি পুরুষের সমান মেধার পরিচয় রেখে সরকারি চাকরিতে যোগদান করব। শুধুমাত্র নৃ গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যূনতম কোটা রাখা যেতে পারে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশ গড়তে হলে মেধাবীদের নিয়েই গড়তে হবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এই কোটা প্রথার কোন প্রয়োজন নাই। কোটা প্রথা পুনর্বহাল সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন। ২০১৮ সালের পরিপত্র যতক্ষণ না বহাল হচ্ছে ততক্ষণ ছাত্রসমাজ রাজপথে থাকবে।
২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার এক পরিপত্রের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এতে পুনরায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।