সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ও ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় তাদের নিজ নিজ বাসার ঠিকানায় আলাদা নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশ পাওয়ার ২১ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনার হিসাব দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কমিশনে সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম শামছুদ্দোহা খন্দকার ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা আলাদা দুটি মামলার অভিযোগপত্রের অনুমোদন করেছে কমিশন। তদন্ত কর্মকর্তা শিগগির এ অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন।
দুদক সূত্র জানায়, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধান দলের প্রধান মো. হাফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশ ঢাকার গুলশানে বেনজীরের বাসায় টানিয়ে দেওয়া হয়। বেনজীর সপরিবারে বিদেশে থাকায় নোটিশ এভাবে জারি করা হয়েছে। মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধান টিমের প্রধান আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশগুলো ঢাকায় মতিউরের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে না পারলে তারা কমিশনে আবেদন করে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে নিতে পারবেন। এর ব্যত্যয় হলে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা হবে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা মামলা হবে। আইনে নন-সাবমিশন মামলায় তিন বছর এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, আলাদা দুটি দলের অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এর ভিত্তিতে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সম্পদের হিসাব জমা দিলে তাদের দেওয়া তথ্য ও দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য যাচাই করা হবে। এরপর যাদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য মিলবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্পদের হিসাব চাওয়া বেনজীরের পরিবারের সদস্যরা হলেন তাঁর স্ত্রী জিশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর।
মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা হলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ইন্সিতা ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী।
শামছুদ্দোহা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
এ কে এম শামছুদ্দোহা খন্দকার ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছিল ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর।
অভিযোগপত্রে দেখা যায়, ফেরদৌসী গৃহিণী হওয়ার পরও তাঁর নামে স্বামীর চেয়ে বহু গুণ সম্পদ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বামী অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা টাকার উৎস গোপন করতে স্ত্রীর নামে রেখেছেন।