গণমাধ্যমের কাছে বারবার অস্বীকার করলেও অবশেষে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের হিসাব স্বীকার করল বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার।
মূলত মোট রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন মেয়াদি বিনিয়োগ এবং ঋণের দায় বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যে হিসাব করা হয়, সেটিই ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বা এনআইআর।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নিট রিজার্ভের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের বন্ডে থাকা বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে আজ মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর তা থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (এডিএফ), সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় খাতে বিনিয়োগ বাবদ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল–৬ (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ ২১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। আর সেখান থেকে আকু বিল, অন্যান্য চলতি ঋণ ও দেনা খাতের অর্থ বাদ দিলে এনআইআর বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত বছরের অক্টোবরে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এ দেশে একজন তথাকথিত অর্থনীতিবিদ যে ‘ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ বলে একটি হিসাব দাবি করেছেন তা বাংলাদেশ হিসাব করে না। পরবর্তীতে গভর্নরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এনআইআরের হিসাব অস্বীকার করে আসছিলেন।
যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের তথ্য দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত সাংবাদিক এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে এই তথ্য দিতে লুকোচুরি করে আসছিল। তবে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এনআইআরের তথ্য প্রকাশ করেন। এর আগে মেজবাউল হক দাবি করেছিলেন যে দেশে রিজার্ভ শূন্য হলেও কোনো সমস্যা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘রিজার্ভ বেড়েছে। আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। রিজার্ভ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। বিদেশে থেকে ঋণ এসেছে। এটা আমাদের রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করেছে।’ তবে তিনি নতুন করে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের বিষয়ে কিছু বলেননি।
ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ছাড় করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে, ৩০ জুন রিজার্ভ দেখানো হয়েছে ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। তবে ঋণসহায়তা পাওয়ার পর হঠাৎ ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে।