শেষ বাঁশি বাজার পর বেশ উত্তেজিত দেখা গেল ব্রাজিল কোচ দোরিভাল জুনিয়রকে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। পুরো ম্যাচে সুবিধা করতে না পারা ব্রাজিল তখন সম্ভাবনা দেখিয়েছিল ম্যাচে ফেরার! আরেকটা আক্রমণ পেতেই পারত তারা। কিন্তু রেফারির বাঁশিতে শেষ হলো ম্যাচ। তিন ম্যাচে দুই ড্র নিয়ে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোপা আমেরিকার শেষ আট নিশ্চিত করল ৯ বারের চ্যাম্পিয়নরা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে অপেক্ষা করছে উরুগুয়ে।
‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে কলম্বিয়া মাঠে নেমেছিল টানা ২৫ ম্যাচ আর ২ বছর অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও এই দলের কাছেই ২-১ গোলের হার সইতে হয়েছিল সেলেসাওদের। তবে এরপর কোচের বদল হয়েছে, ব্রাজিলের খেলার ধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। কিন্তু কলম্বিয়াকে হারানো হয়নি। প্রথমে লিড নিয়েও ১-১ গোলে ড্র করেছে ব্রাজিল। তাতে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে রানারআপ হয়ে শেষ আটে যাচ্ছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচের সব রঙ দেখা হয়ে গিয়েছিল মূলত প্রথমার্ধেই। ১২ মিনিটে রাফিনিয়ার দুর্দান্ত ফ্রি-কিক জালে না জড়ালে হয়ত হার দিয়েই ম্যাচটা শেষ করতে হতো সেলেসাওদের। পুরো প্রথমার্ধে চাপের মুখে থেকেও ব্রাজিল পুরো ম্যাচে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে রাফিনিয়ার ওই গোলের কল্যাণে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা কলম্বিয়া আগেই ব্রাজিলের ওপর চেপে বসেছিল, কিন্তু রাফিনিয়ার গোল যেন কিছুটা তাঁতিয়ে দিয়েছিল হামেস রদ্রিগেজদের।
জেফারসন লারমা, লুইস দিয়াজরা এরপর খুব একটা সুযোগই দিলেন না ব্রাজিলকে। মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তার করে বারবার আক্রমণে উঠেছেন। ১৮ মিনিটে পেয়ে যায় গোলও। কিন্তু অফসাইডে থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত বাতিল হয় সেই গোল। যদিও সেটা কলম্বিয়ার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বহুগুণে। ম্যাচে এরপর শারীরিক ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই দল। ফাউল আর হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি হয়েছে মাঠে।
উল্টো প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে গোল হজম করে বসে সেলেসাওরা। ডানপ্রান্তে ওভারল্যাপ করেছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের এই রাইটব্যাক। হামেস রদ্রিগেজ নিজেই খানিকটা সরে এসে জায়গা করে দেন তাকে। গোলের জন্য পাসটাও বাড়িয়েছিলেন কলম্বিয়ান নাম্বার টেন। সহজ এক পাস থেকে অ্যালিসন বেকারকে পরাস্ত করতে বেগ পেতে হয়নি মুনোজের। ১-১ গোলের সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে এসে কিছুটা ঢিমেতালে ফুটবল খেলেছে দুই দল। প্রথমার্ধের ঝাঁঝালো ফুটবল দেখা যায়নি কারো মাঝেই। ব্রাজিলও আক্রমণ ছেড়ে কিছুটা মনোযোগী হয় রক্ষণে। সুযোগ পেলেই ভয় ধরাচ্ছিলেন হামেস রদ্রিগেজ আর জন কর্দোবা। দুজনে মিলে ব্যস্ত রেখেছিলেন ব্রাজিলের রক্ষণকে। গোলের নিশ্চিত সুযোগ মিসও করেছিল কলম্বিয়া।
৬৯ মিনিটে কর্দোবার শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। আর ৮৪ মিনিটে রাফায়েল বোরে মিস করেছেন ওপেন নেট। ব্রাজিল বিপরীতে উপহার দিয়েছে ছন্নছাড়া ফুটবল। ৯৫ মিনিটে আন্দ্রেয়াস পেরেইরার শটের আগে দ্বিতীয়ার্ধে একবারও লক্ষ্যে বল রাখতে পারেনি তারা। ১-১ ড্র-টাই তাই শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হলো ব্রাজিলের।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা ব্রাজিল খেলতে নেমেছিল ৪ তারকার নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি নিয়ে। যে তালিকায় ছিলেন দলের সেরা তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের নামটাও। ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় শঙ্কাটাই সত্যি হয়ে এলো ব্রাজিল ভক্তদের জন্য। টানা দুই ম্যাচ হলুদ কার্ড হজম করে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেন ব্রাজিলিয়ান নাম্বার সেভেন। কোপার নকআউট পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাই রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকাকে ছাড়াই পরিকল্পনা সাজাতে হবে কোচ দোরিভাল জুনিয়রকে।