Sunday, November 24, 2024
spot_img
Homeসারাদেশভাসছে গাইবান্ধা কুড়িগ্রামসহ উত্তরের বহু গ্রাম

ভাসছে গাইবান্ধা কুড়িগ্রামসহ উত্তরের বহু গ্রাম

সিলেট অঞ্চলের পর এবার বন্যা মারাত্মক রূপ নিচ্ছে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ উত্তরের জেলাগুলোতে। বিশেষ করে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ডুবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। বিভিন্ন স্থানে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, বাঙ্গালীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে হু হু করে। যে কোনো সময় এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বন্যার মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানিও ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও বাড়ছে হু হু করে। অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে সরকারি হিসাবে পানিবন্দি ৪ হাজার ৯০০ পরিবারের ২০ হাজার মানুষ। তবে দুর্গত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানান স্থানীয়রা। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার।

এ বিষয়ে ইউএনও তরিকুল ইসলাম জানান, ত্রাণ বরাদ্দের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণেই নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে গাইবান্ধার চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বুধবার বিকেলে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়াডের্র দক্ষিণ উল্যা এলাকায় ৩০ ফুট বাঁধ ধসে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। বর্তমানে জেলায় মোট পানিবন্দি আছে ১৭ হাজার ৮২০ পরিবার। ১৮১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, জিআর চাল, নগদ অর্থ মজুত রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে একটি হটলাইন নম্বর দেওয়া রয়েছে। সেখানে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা যে কেউ যে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন।

কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দুধকুমার, গঙ্গাধর, শংকোষ, ফুলকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এরই মধ্যে জেলার ৪২১টি চর-দ্বীপচরের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম পাউবোর তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ২২২ মিলিমিটার। বুধবার সকালে দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৯.৫৮ মিলিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় তা বিপৎসীমা ২৯.৬০ মিলিমিটার স্পর্শ করে। একই দিন সকালে নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। অব্যাহত আছে পানি বৃদ্ধি।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments