কোচ নেস্তর লেঞ্জোর অধীনে নতুন করে উজ্জ্বীবিত কলম্বিয়া। টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজেয় থেকে তারা কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে গেছে। দলটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৩২ বছর বয়সী তারকা মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজ। অনেকে তার শেষ দেখে ফেললেও, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তিনি সেটিকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। একইসঙ্গে কলম্বিয়াকে ফাইনালে তোলার দিনে হামেস ভেঙেছেন লিওনেল মেসির রেকর্ড। ২৩ বছর পর দলকে ফাইনালে তুলে তিনি আবেগঘন এক বক্তব্য-ও দিয়েছেন।
কোপা আমেরিকার এক আসরে সর্বোচ্চ ৬ গোলের অ্যাসিস্ট করেছেন কলম্বিয়ান এই তারকা। এর আগে এক আসরে সর্বোচ্চ ৫ অ্যাসিস্ট করেছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তাকে পেরিয়ে এখন পর্যন্ত চলতি কোপা আমেরিকায় হামেস রদ্রিগেজ সরাসরি অবদান রেখেছেন ৭ গোলে। তর্কাতীতভাবেই এবারের কোপায় সেরা পারফর্মারও এই কলম্বিয়ান তারকা।
কোপার সেমিফাইনালে আজ (বৃহস্পতিবার) উরুগুয়ের বিপক্ষে কলম্বিয়ার একমাত্র গোলেও ছিলেন হামেস। কর্নার থেকে তিনি বল ফেলেছিলেন দূরের পোস্টে। সেখানে থাকা জেফারসন লারমা মাথা ছুঁইয়ে এনে দেন জয় নিশ্চিত করা গোলটি। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে জোড়া অ্যাসিস্ট ছিল হামেসের। পরের ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ের দিনে করেছেন ১ অ্যাসিস্ট। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে গোল বা অ্যাসিস্ট না পেলেও প্রতিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পানামার বিপক্ষে ৫-০ গোলে জয়ের ম্যাচে হামেস করেছেন দুই অ্যাসিস্ট। পেয়েছেন এক গোল।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবারও কোপার ফাইনালে ওঠায় বেশ আবেগাপ্লুত হামেস রদ্রিগেজ। আনন্দে কান্নাভেজা চোখে তিনি বলেন, ‘আমরা দারুণ এক ম্যাচ খেলেছি। যদিও রেফারি সঠিক ছিলেন না। (লাল কার্ড প্রসঙ্গে) ডিফেন্ডার সঠিক অবস্থানেই ছিল। কিন্তু ওই ঘটনায় ম্যাচ কঠিন হয়ে যায়, বিশেষত প্রতিপক্ষ খুবই কঠিন ছিল, তবে আমরা কাঙ্ক্ষিত জয় পেয়েই ফাইনালে উঠেছি। এই মুহূর্তের জন্য আমি ১৩ বছর অপেক্ষা করেছি, এটাই চেয়েছি। আমরা খুব খুশি।’
কেবল মেসির রেকর্ডই নয়, গোল বানিয়ে দেওয়ার এই কীর্তিতে রদ্রিগেজ ছুঁয়েছেন ফুটবলের ‘রাজা’ পেলেকেও। ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের পর লাতিন আমেরিকার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বড় কোনো টুর্নামেন্টে ৬টি গোলে সহায়তা করেছেন রদ্রিগেজ। অথচ তিনি হাঁটছিলেন ক্যারিয়ারের শেষের পথে। এক সময় রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে মাঠ কাঁপানো এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এখন থিতু হয়েছেন ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোতে। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১০০টি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন হামেস।
দলকে ফাইনালে নেওয়ার পেছনে হামেসকে কৃতিত্ব দিয়েছেন আরেক কলম্বিয়ান তারকা লুইস দিয়াজ। তিনি বলেন, ‘সে (হামেস) আমার আদর্শ, একসময় সে-ফ্যালকাও ও কুয়াদ্রাদো টিভিতে খেলতে দেখেছি, এখন তাদের সঙ্গে খেলা আমার জন্য গর্বের বিষয়। সে এটা ডিজার্ভ করে, এটা তারই কাপ কোনো সন্দেহ নেই। সে অনেক ভুগেছে, তবে আবার অনেক সুন্দর মুহূর্তও তাকে দিয়েছে ফুটবল। গোল করা ও জোগান দেওয়ায় নিজের ক্লাস ও সামর্থ্য আবারও দেখিয়েছেন তিনি।’
এতদূর আসার পর এখন কলম্বিয়ানদের সামনে আর একটি বাধা বাকি। কোপার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের মোকাবিলা করতে হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে আগামী সোমবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া।