রাত থেকে পানি ঘরে ঢুকতে শুরু করে। অনেক কিছু ভেসে গেছে। শুধু কোনোমতে ঘরের চাল রক্ষা করতে পারছি।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আলেয়া বেগম। তার ভিটাবাড়ি সব তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শুধু আলেয়া বেগম নয়, তার মতো অনেকেরই একই অবস্থা। নদীভাঙনে পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন দিশাহারা। তিস্তাপাড়ে চলছে অসহায় এসব মানুষের আহাজারি। তাদের এখন ঠাঁয় হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। অনেকে বাঁধের ওপর, সরকারি জমি ও স্কুলের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিলীন হয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি। অন্যরা তাদের বাড়ি সরিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকের আসবাবপত্র ভেসে গেছে নদীতে।
এসময় অসহায় মানুষগুলো বলছিলেন, ‘কোথায় যাবো কী করবো’। এভাবে বিলাপ করছেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
অন্যদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর ৪৮ নম্বর ডাউয়াবাড়ি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও আলহাজ আছের মাহামুদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩০০ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা উত্তর ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, কালীগঞ্জে ভোটমারী, আদিতমারী মহিষখোচা, সদরের খুনিয়াগাছ, কালমাটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কথা হয় ছকিমোন বেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানিতে মোর পাঁচ হাঁস, ১০ মুরগি ভাসি গেইছে। এলা বাড়িটাও ভাঙতে হয়। এখন কই যামু?’
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, নদীতে ঘরবাড়ি বিলীনের কথা শুনে এসেছি। দেখলাম চোখের পলকেই নদীর গর্ভে ৫০টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেলো। এ পর্যন্ত এই এলাকায় প্রায় ২০০ ঘর বিলীন হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবার।
লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পানি ওঠানামার কারণে ধরলা ও তিস্তায় বেশি কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙন শুরু হলে বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, তিস্তা ও ধরলার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০০ টন চাল, পাঁচ লাখ টাকা ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।