Thursday, November 21, 2024
spot_img
Homeখেলাধুলা১০০ বছর পর প্যারিসে মশালের আলো

১০০ বছর পর প্যারিসে মশালের আলো

শিল্প-সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের বড় এক বিজ্ঞাপন প্যারিস। সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এই শহরে আরও একবার জ্বলেছে অলিম্পিকের মশাল। ফলে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্ববৃহৎ এই আসর সর্বোচ্চ তিন বার আয়োজনে লন্ডনের সমকক্ষ এখন প্যারিস।

আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রা ১৮৯৬ সালে। প্রথম অলিম্পিকের পরের আসরই হয়েছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। ১৯০০ সালের পর অলিম্পিক আয়োজনে ফ্রান্সকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দুই যুগ। ১৯২৪ সালের পর তৃতীয় বারের মতো প্যারিসে অলিম্পিক আয়োজন, তাতে এবার অপেক্ষা ঘুচেছে ১০০ বছরের

১০০ বছর পর ভালোবাসার নগরী অলিম্পিক মশালের আলোয় আলোকিত হওয়ার আগে ১০০ বছর বয়সী চার্লস কোস্তেকে হাজির করা হয় হুইল চেয়ারে করেই। ১৯৪৮ অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ে সোনাজয়ী ও ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি বয়সী বেঁচে থাকা সোনাজয়ী এই সাইক্লিষ্ট অলিম্পিকের মশাল তুলে দেন জুডোকা টেডি রেনার ও সাবেক স্প্রিন্টার মেরি-হোসে পেরেককে। তারা দুজন মশাল প্রজ্জ্বলন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখা মিলল ফরাসি ফুটবল কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের। মূল অলিম্পিক স্টেডিয়াম স্তাদ দে ফ্রান্স থেকে তিনি অলিম্পিক মশাল নিয়ে দৌড়ে পৌঁছে দেন অন্যদের হাতে। চলতে থাকে মশাল দৌড়।

বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফুটবল কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানও শামিল হলেন অলিম্পিকের উৎসবে। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের শর্ট ফিল্মে কিংবদন্তির হাতে অলিম্পিকের মশাল

একই সময় শুরু হয় অ্যাথলিটদের নৌ প্যারেড। অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিসের কন্টিনজেন্ট দিয়ে শুরু, এরপর শরণার্থী দল। তারপর বর্ণানুক্রমিকভাবে একে একে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কন্টিনজেন্ট আসতে থাকে বার্জে করে। তারই মাঝে মাঝে ছিল আমেরিকান পপস্টার লেডি গাগা, ফরাসি-মালিয়ান পপস্টার আয়া নাকামুরাসহ বিশ্বের খ্যাতিমান সব তারকার পারফরম্যান্স। ছিল ব্রেক ড্যান্স, অপেরা সংগীত। এসব পারফরম্যান্সে উঠে আসে ফ্রান্স ও অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস-ঐতিহ্য। অলিম্পিক গেমসকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখা ব্যক্তিদেরও স্মরণ করা হয়।

স্বাগতিক দল হিসেবে সবার শেষে মার্চপাষ্ট শুরু করেছে ফ্রান্স

মার্চপাস্ট শেষে সিন নদীর বুকে ছুটল ধাতব ঘোড়া! তাতে নাইটদের মতো রুপালি পোশাকের একটি মেয়ে বসে। রুপালি হুডিতে মুখটা ঢাকা। পিঠে তার অলিম্পিকের পতাকা। প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতব ঘোড়া সিনের বুক পাড়ি দিয়েছে। নদী পাড়ি দিয়ে সাদা ঘোড়ায় চড়ে সরাসরি মঞ্চে গিয়ে পতাকা অর্পণ করেছে মেয়েটি। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ফ্রান্সের মুক্তিকামী বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের সাজ দেওয়া হয়েছে তাকে।

পিঠে অলিম্পিক বেঁধে নিয়ে ঘোড়ায় ছুটছে মেয়েটি

পতাকা অর্পণ শেষে মঞ্চে কথা বলেন ফ্রান্সের তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন টনি এস্তাগুয়েত। এরপর মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ। তিনি টেকসই, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর, লিঙ্গ বৈষম্যহীন এবং সবার অংশগ্রহণমূলক অলিম্পিকের নিশ্চয়তা দিলেন। বললেন, ‘অলিম্পিক গোটা বিশ্বকে একসূত্রে গাঁথে। আমাদের অলিম্পিক বিশ্বে কোনো দক্ষিণ বা উত্তর নেই।’

উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের আগে বৃষ্টিতে ভিজেছে প্যারিস। দুশ্চিন্তাও দেখা দিয়েছিল। অলিম্পিক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যারিসের দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্ক। কিছু ট্রেন যাত্রা বাতিল করায় উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান দেখতে প্যারিসে আসা নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে  দর্শকদের।

এ ঘটনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বিবিসিকে টমাস বাখ বলেন, ‘কোনো উদ্বেগ নেই, ফরাসি কর্তৃপক্ষের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে বিশ্বের আরো ১৮০টি গোয়েন্দা বাহিনী। তাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার যথেষ্ট কারণ আছে।’

প্যারিস শহরের ওপরে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার তিন রংয়ের বাহার

প্যারিস অলিম্পিকে ৩২টি ক্রীড়ার মোট ৩২৯টি ইভেন্টে ১০ হাজারেরও বেশি অ্যাথলিট লড়ছেন। বাংলাদেশ থেকে পাঁচজন অ্যাথলিট প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তারা হলেন আর্চারিতে সাগর ইসলাম, স্প্রিন্টে ইমরানুর রহমান, শুটিংয়ে রবিউল ইসলাম, সাঁতারে সোনিয়া আক্তার ও সামিউল ইসলাম রাফি। গতকাল সিন নদীতে ব্যতিক্রমী মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন আর্চার সাগর ইসলাম।

পুরুষ ও নারী অ্যাথলিটের সংখ্যায় সমতা আনার কঠিন কাজটিও করেছে তারা। এবারের অলিম্পিকে ৫ হাজার ২৫০ জন পুরুষ ও সমানসংখ্যক নারী অ্যাথলিট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments