Thursday, September 19, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ঢাকার ৩১ হাসপাতালের তথ্য: আহত ৬ হাজার ৭০৩ জন

ঢাকার ৩১ হাসপাতালের তথ্য: আহত ৬ হাজার ৭০৩ জন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীতে সংঘর্ষ ও সংঘাতে আহত ৬ হাজার ৭০৩ জনের কথা জানা গেছে। তাঁরা ৩১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে এসেছেন।

ইটপাটকেল ও লাঠি বা রডের আঘাতে আহত হয়ে কিছু মানুষ হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে বেশি মানুষ হাসপাতালে এসেছেন ছররা গুলি, রাবার বুলেট বা বুলেটবিদ্ধ হয়ে। আবার কেউ কেউ এসেছেন কাঁদানে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে। সাউন্ড গ্রেনেডেও মানুষ আহত হয়েছেন।

রাজধানীতে সংঘর্ষ-সংঘাত শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল না। বেশি সংঘর্ষ হয়েছে উত্তরা, বাড্ডা-রামপুরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর-বছিলা, ধানমন্ডি এলাকায়। আহত ব্যক্তিরা এসব এলাকার কাছের হাসপাতালে প্রথমে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে ধারণা করা যায়।

২২টি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ২ হাজার ৫৯৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আহত মানুষ এসেছিলেন রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ৯টি, বাকি ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল। তবে ৭টি বেসরকারি হাসপাতাল কোনো তথ্য দেয়নি। যদিও মোট কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।

রোগীদের একটি অংশ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। একটু গুরুতর রোগীকে এক বা দুই দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এখনো অনেক রোগী হাসপাতালে আছেন। আহতদের কেউ কেউ হাসপাতালেও মারা গেছেন।

তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সব আহত মানুষের তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে ঠিকমতো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতাল চিকিৎসা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ছেড়ে দিয়েছে। রোগীর নাম, ঠিকানা, বয়স লিখে রাখার সময় ও সুযোগ ছিল না।

২৩ জুলাই বিকেলে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মেজর (অব.) মো. হাফিজুল ইসলাম  বলেন, হাসপাতালে রোগীর ঢল নেমেছিল। সবার তথ্য রাখা সম্ভব হয়নি।

সংঘর্ষ-সংঘাতের সময় পুলিশ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে ছররা গুলিও ব্যবহার করে। ছররা গুলি অনেকের চোখে লেগেছে।

পঙ্গু হাসপাতালে বেশি রোগী

সংঘর্ষে আহত সবচেয়ে বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে। ২৩ জুলাই হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, এই হাসপাতালে ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৯ জন চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন ২৩১ জন। হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫৩৭ জনকে। অর্থাৎ এই হাসপাতালে আসা ৪২ শতাংশ রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার দরকার ছিল।

যেকোনো বড় সংঘর্ষ বা দুর্যোগের ঘটনায় হতাহত মানুষ বেশি আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২৩ জুলাই বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

তবে অনেকের ধারণা, এই প্রতিষ্ঠানে আরও অনেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাঁদের সবার তথ্য কর্তৃপক্ষের রাখা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা মেডিকেল ও পঙ্গু হাসপাতাল ছাড়া আরও সাতটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখেছেন  প্রতিনিধিরা। সেগুলো হচ্ছে: পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগরে তিনটি হাসপাতাল (শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল), মহাখালীতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উত্তরার বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। সরকারি নয়টি হাসপাতালে ৪ হাজার ১১০ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

সাতটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এসব হাসপাতালের আশপাশের মানুষ বলেছেন, আহত মানুষ এসব হাসপাতালে এসেছিলেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য যেন সাংবাদিক বা অন্য কাউকে না দেওয়া হয়, তার জন্য চাপ থাকার কথা বলেছেন কেউ কেউ।

বেসরকারি হাসপাতাল

২২টি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ২ হাজার ৫৯৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আহত মানুষ এসেছিলেন রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে। হাসপাতালের উপমহাপরিচালক রুবেল হোসেন  বলেন, ৯৫০ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৮ জুলাই এসেছিলেন ৩০০ জন, ১৯ জুলাই ৬০০ জন এবং ২০ জুলাই ৫০ জন। তিনি বলেন, এসব রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অন্য ২১টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আছে ধানমন্ডিতে তিনটি হাসপাতাল (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নগর হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ইবনে সিনা হাসপাতাল), উত্তরা এলাকায় পাঁচটি হাসপাতাল (উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, হাই-কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, শিন-শিন জাপান হাসপাতাল, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল), রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় চারটি হাসপাতাল (নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল, অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ডেলটা হেলথ কেয়ার ও ইস্ট ভিউ হাসপাতাল ও ল্যাব), শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ী এলাকার তিনটি হাসপাতাল (প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল, ইসলামিয়া হাসপাতাল ও সালমান হাসপাতাল), মোহাম্মদপুরে আল-মানার হাসপাতাল, মিরপুরে আলোক হাসপাতাল ও মার্কস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আগারগাঁওয়ে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল ও পুরান ঢাকার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর বাইরে উত্তরার সৈয়দ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য দুটি সূত্র থেকে মুঠোফোনে নেওয়া হয়েছে।

 

সংঘর্ষ-সংঘাতের সময় পুলিশ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে ছররা গুলিও ব্যবহার করে। ছররা গুলি অনেকের চোখে লেগেছে। ছররা গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা তিনটি হাসপাতাল ঘুরেছেন প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে আছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বেসরকারি লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চোখে আঘাত নিয়ে এসেছিলেন ৪২৪ জন এবং ঢাকা মেডিকেলে ৪১ জন। অন্যদিকে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ১৫০ জন। এই তিন হাসপাতালে ৬১৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের কারও এক চোখে আঘাত লেগেছে, কারও দুই চোখে।

এসব আহত ব্যক্তির মধ্যে অনেকেরই চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে, করতে হবে। অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন এমন একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, অনেকেই দৃষ্টি ফিরে পাবেন না।

তথ্য পাওয়া যায়নি

সাতটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এসব হাসপাতালের আশপাশের মানুষ বলেছেন, আহত মানুষ এসব হাসপাতালে এসেছিলেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য যেন সাংবাদিক বা অন্য কাউকে না দেওয়া হয়, তার জন্য চাপ থাকার কথা বলেছেন কেউ কেউ।

একটি হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ২৬ জুলাই  বলেন, কোনো তথ্য দিতে হলে স্থানীয় থানার অনুমতি নিতে হবে। আরেকটি হাসপাতালের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ নিয়ে গেছে। কেন নিয়েছে, তা তিনি জানেন না।

তথ্য দেয়নি এমন হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে রামপুরা-বাড্ডা এলাকার আল-রাজী ইসলামী হাসপাতাল, বেটার লাইফ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল, যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া এলাকার কিউর কনসালটেশন, সেফ এইড ও অনাবিল হাসপাতাল এবং পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতাল।

সূত্র প্রথম আলো

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments