Monday, September 16, 2024
spot_img
Homeবিশ্বকোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে

কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবারও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এখনও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাধিক বলপ্রয়োগের বিষয়ে সামনে আসা নানা প্রতিবেদনের বিষয়েও তিনি শঙ্কিত।

স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ জুলাই) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে এবং সাংবাদিকদের পৃথক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসব মন্তব্য করেন।

এদিনের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক প্রথমে বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। এরপর সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে নানা উত্তর দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মহাসচিব বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। তিনি আজ ছাত্র বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার খবরের দিকেও লক্ষ্য রাখছেন এবং শান্তি ও সংযমের জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত হাজার হাজার তরুণ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সম্পর্কে সামনে আসা নানা রিপোর্টের বিষয়েও তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সহিংসতার সমস্ত কর্মকাণ্ডের অবিলম্বে, স্বচ্ছভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা রাজধানী ঢাকা এবং এখানে নিউইয়র্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে মানবাধিকারকে সম্মান ও সমুন্নত রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করি। জাতিসংঘ-চিহ্নিত যানবাহন আর বাংলাদেশে (বিক্ষোভ দমনে) মোতায়েন করা হচ্ছে না বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিবৃতিও আমরা নোট করেছি। আমরা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি এবং পুনর্ব্যক্ত করছি, জাতিসংঘের সৈন্য-পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে তাদের মোতায়েনের প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষী হিসাবে বাধ্যতামূলক কাজগুলো সম্পাদন করার সময়ই কেবল জাতিসংঘের চিহ্ন-সম্বলিত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে।

পরে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, আপনি একটু আগে যে বিবৃতি দিয়েছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশের বিষয়ে আমার তিনটি প্রশ্ন আছে। তরুণ নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ডাইনি খোঁজার’ মতো তল্লাশি চালানো, তাদের গুলি করা এবং হেফাজতে রেখে বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে মহাসচিবের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমি আবারও নিজের কথাই পুনরাবৃত্তি করব। তবে মহাসচিব বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি শঙ্কিত। এবং তিনি এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত যে কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এরপর ওই সাংবাদিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, তিনি (মহাসচিব) কি এখনও অন্যান্য দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘের পতাকা ধরে রাখার বিষয়ে এই একই লোকের অংশগ্রহণের বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ঠিক আছে, এটা পরিষ্কার যে, আমরা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি সৈন্যদের ওপর নির্ভর করি যারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং সম্মান করার জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে।

এরপর ওই সাংবাদিক বলেন, (বাংলাদেশ বিষয়ে) পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মহাসচিবের কীভাবে প্রমাণের প্রয়োজন, যেহেতু জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানরা বলেছেন, তদন্তের জন্য তারা সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত এবং বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পণ্ডিত এবং নোবেল বিজয়ীরা (বাংলাদেশ বিষয়ে) জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করছেন?

জবাবে মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সর্বদাই তার কাছে থাকা ম্যান্ডেটের এখতিয়ারের মধ্যে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।

পরে এক প্রশ্নকারী বলেন, সমস্ত হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে বাংলাদেশ সরকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই বিষয়ে আপনার কোনও পর্যবেক্ষণ আছে।

জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন: আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- আমি কিছুক্ষণ আগে (বিবৃতিতে) যা বলেছিলাম সেটিরই পুনরাবৃত্তি করা, আর তা হলো- সহিংসতার সমস্ত ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা দরকার, স্বচ্ছভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং যারা সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে।

পরে ওই প্রশ্নকারী আবারও জানতে চান, সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর ঢাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তিতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন ভয়াবহ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জাতিসংঘ কী বাংলাদেশকে সাহায্য করবে?

জবাবে এই মুখপাত্র বলেন: সংকটের সময়ে সংলাপ এগিয়ে নিতে যেকোনও দেশকে সাহায্য করতে আমরা সবসময় প্রস্তুত। জাতিসংঘ এমন কারও সঙ্গে কোনও ক্ষতিপূরণ প্রকল্পে জড়িত থাকে না যারা দুঃখজনকভাবে বিশ্বের কোথাও বিক্ষোভের সময় সম্পত্তি বা পরিবারের সদস্যদের হারান।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments