Friday, November 22, 2024
spot_img
Homeজাতীয়হানাদার বাহিনীর মতোই টর্চার করলো মেয়েদের ওপর: প্রধানমন্ত্রী

হানাদার বাহিনীর মতোই টর্চার করলো মেয়েদের ওপর: প্রধানমন্ত্রী

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মেয়েদের ওপর নির্যাতনকে হানাদার বাহিনীর মতো বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মেয়ে হয়ে মেয়েদের ওপর যে টর্চার, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে টর্চার করেছে, ঠিক সেই ধরনের টর্চার করলো মেয়েদের ওপর।’

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়িতে কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় আগুন দিয়ে পোড়ানো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? আর সেই সঙ্গে আজকে কত মানুষের জীবন গেছে! চারদিক থেকে অস্ত্রধারী কোথাও…ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ কামরা, সেখানে এখন ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে হাতে অস্ত্রসহ; কারও হাতে তরবারি, কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে শাবল নিয়ে পুরো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের সব জিনিস পুড়িয়ে দেওয়া। মেয়েদের হোস্টেল-রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজে মেয়ে হয়ে মেয়েদের ওপর যে টর্চার, পাকিস্তান আমলে হানাদার বাহিনী যেভাবে টর্চার করেছে, ঠিক সেই ধরনের টর্চার করলো মেয়েদের ওপর।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা ছাত্রলীগ করে, ছাত্রলীগ করতে পারবে না। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার। এক মেয়েকে ১০০ বার ওঠবস করালো। এদের হাত থেকে সাংবাদিক রেহাই পাসনি, সাংবাদিক হত্যা করেছে। সাংবাদিককে মারধর করেছে। সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেউ তো রেহাই পায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যে প্রাণহানি ঘটলো, যেখানে দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে? কার স্বার্থে? কেন? সেই সঙ্গে পুলিশ হত্যা করে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হলো। আমাদের গাজীপুরের কর্মীদের মেরেছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে, সেখানে থেকে বের করে নিয়ে এসে পা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ, কত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের গাড়ি চালাচ্ছে, তাকে যেভাবে মারা! এমনকি আমার মোটরকেডের পাইলটক থাকে যাত্রাবাড়ীর ওদিকে, ডিউটিতে আসবে, তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে কোথায় পুলিশ আছে, পুলিশকে মারতে হবে আর আওয়ামী লীগ কোথায় থাকে, তাকে মারো।’

সবার অজান্তেই ধীরে ধীরে ধর্মান্ধ শ্রেণি গড়ে উঠেছে

আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে এবং যে জাতি হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত জাতি। আমরা যখন সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি আমরা কী দেখলাম? ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ওগুলো এখনো ছাড়েনি। সেখানে ধর্মান্ধতা এবং কুপমন্ডুকতা দিয়ে একটা শ্রেণি কিন্তু ধীরে ধীরে সবার অজান্তেই গড়ে উঠেছে। যারা ওই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ছিল। দেশে গণহত্যা, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আর সেই আঘাতটা আপনারা দেখলেন কিছু দিন আগে। কোটা আন্দোলনের নামে যখন সব রাস্তায় বেরিয়ে এলো, আমরা তাদের বললাম, কোটা আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে। আমরা এটা মেনে নিয়ে বাতিল করে দিয়েছিলাম কোটা পদ্ধতি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করলো, সেখানে আমার করা প্রজ্ঞাপনটা বাতিল করে দিলো হাইকোর্ট। আবার কোটা ফিরে এলো। সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করা হলো। আপিল করা হলে হাইকোর্টের রায়টা সাসপেন্ড করে দেওয়া হলো। কাজেই আবার সেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেলো এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখও দেওয়া হলো। ৫ জুন এ রায় হয়েছিল। পুরো জুন মাস চলে গেলো। জুলাই মাসে ৭ তারিখ থেকে হঠাৎ দেখি, আবার কোটার জন্য আন্দোলন—যখন কোটা পদ্ধতি নেই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তখন কোটা পদ্ধতি নেই কিন্তু তখনই আন্দোলন। আর আন্দোলন না, দেখা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে সব জড়ো হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক থেকে শুরু করে, গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে অনেক শিশুদের নিয়েও হাজির হচ্ছে। আমার খুব সন্দেহ হলো, এটা পেছনে অন্য কিছু আছে। আমি সেটা বলেও ছিলাম। তাহলে এ ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে! যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, এমনকি তারা মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল সে ব্যবস্থাও করা—সবই করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কিছুই মানবে না। হাইকোর্টের (শুনানির) তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হলো। অ্যাপিলেট ডিভিশন চেম্বার জজ থেকে রায় দেওয়া হলো, ঠিক যা চেয়েছিল তার থেকে বেশি। তাদের একদফা দাবি ছিল কোটা সংস্কার। যে দাবি করেছিল, সেই দাবি সংস্কার করে দেওয়া হলো কিন্তু সেই সংস্কার করে দেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন থামে না, দাবি থামে না।

 

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments