বিজয়ের আনন্দ অবশ্যই করব, কিন্তু এখন সময় সংযমের
—মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্মাতা
স্বাধীন দেশে স্বাগত! কী করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতির কন্যা থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এবং নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসকে পরিণত হলো শেখ হাসিনা। এটা ভবিষ্যতে ইতিহাসের ছাত্ররা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করবেন। এবং রাজনীতিকেরা শিক্ষা নেবেন আশা করি।বিজয়ের আনন্দ অবশ্যই করব! কিন্তু এখন সময় সংযমের, চোখ-কান খোলা রাখার। আমরা ২০ বছর প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখেছি। প্রতিহিংসার উত্তর দিব আমরা কাইন্ডনেস এবং এমপ্যাথি দিয়ে। পাশাপাশি আমরা চোখ খোলা রাখব আগামী দু-তিন দিন। নিশ্চয়ই আমরা একটা মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাব। লাস্টলি, স্যালুট টু বাংলাদেশি ইয়ুথ অ্যান্ড পিপল ফ্রম অল ওয়াকস। টুগেদার উই স্ট্যান্ড টল।এই আন্দোলন রাজনীতিবিদদের জন্য অ্যালার্ট
—আসিফ, সংগীতশিল্পী
একটা স্বৈরাচারের পতন হলো। যেভাবে দেশ চলছিল, সেভাবে আসলে দেশ চলে না। শেষ পর্যন্ত আমাদের ছাত্রসমাজ বিজয়ী হয়েছে। প্রমাণিত হয়ে গেল, বাংলাদেশে ১৯৫২, ৬৯, ৯০ এবং ২০২৪—ছাত্ররা কখনো ব্যর্থ হয়নি। এখন নতুন বাংলাদেশ হবে। আগের মতো লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি হবে না, এটাই প্রত্যাশা। প্রতিটি দল থেকে গণতন্ত্রচর্চা শুরু করতে হবে। তাহলে দেশের গণতন্ত্র দৃঢ় থাকবে। এই আন্দোলন রাজনীতিবিদদের জন্য অ্যালার্ট। ভবিষ্যতে ভুল করলে এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে। স্বজনপ্রীতি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি আর চলবে না। নতুন প্রজন্ম জেগে উঠেছে। তারা আর সহিংসতাভিত্তিক দলের সঙ্গে থাকবে না। প্রতিহিংসা ভুলে সবাই আমরা নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, এটা ছাত্ররাই ঠিক করবে
—অমিতাভ রেজা চৌধুরী, নির্মাতা
এটা নতুন প্রজন্মের জয়। ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের সংহতি জানিয়ে বলেছিলাম, ওরাই রাষ্ট্র ঠিক করবে। ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ চাই, এটা ছাত্ররাই ঠিক করবে। সুতরাং নতুন সরকারে তাদের অংশগ্রহণ যেন থাকে। সংবিধানে যেখানে পরিবর্তন প্রয়োজন, সেখানেও যেন তারা অংশগ্রহণ করে। গণতন্ত্র রিস্টার্টের এটা মাত্র শুরু। আমাদের টিচার্স নেটওয়ার্ক থেকে যে রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, সেটা যেন পালন করা হয়।বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হলো
—আলম আরা মিনু, সংগীতশিল্পী
আজকের স্বাধীনতা, এই দেশ, ছাত্র-ছাত্রীদের দান। যারা বুকের তাজা প্রাণ, তাজা রক্ত অকাতরে দান করল, তাদের জন্যই আজ আমরা মুক্তির স্বাদ পেলাম। বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হলো। এবার দেশটাকে নতুন রূপে দেখার আশায় থাকলাম। এখনো আরও অনেক বড় পরীক্ষা বাকি। সামনের দিনগুলো আরও বড় পরীক্ষার। অনেক বড় দায়িত্ব এখন দেশকে সুন্দর করে সাজাবার। কোনোভাবেই আর এই স্বাধীনতাকে বিক্রি করা যাবে না। আমরা শান্তি চাই।তোমাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়
—রোবেনা রেজা জুঁই, অভিনেত্রী
বেঁচে থাকতে স্বাধীনতা দেখতে পারব, একসময় সেই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিছু বলতে, কিছু লিখতে গিয়ে গুম, খুন, মানসিক হয়রানির শিকার হবার আতঙ্ক কাজ করবে না, লিখতে বসে বারবার মুছে ফেলব না স্ট্যাটাস—এই রকম স্বাধীনতা জীবদ্দশায় উপভোগ করব—কল্পনাতেও আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কখনো সার্টিফিকেট নেওয়া, সুবিধা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি আর এবার নিজ সন্তানদের যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে দেখলাম। আমরা দুই যুগের মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শ পেলাম। আমাদের যেই বাচ্চারা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয়েছ, আহত হয়েছ, তোমাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তোমাদের দেখানো আত্মত্যাগের পথে যেন আমাদের আগামীর বাচ্চারা চলতে পারে, নতুনভাবে স্বাধীন দেশকে গড়তে, পরিচালিত করতে পারে, সেই দোয়া করি।আর যেন কোনো অন্যায়, কোনো অবিচার না হয় এই দেশে
—নাজনীন হাসান চুমকি, অভিনেত্রী
বাংলাদেশের বাঙালিরা ন্যায্য দাবি করলে তাঁরা যে সেটা আদায় করতে জানে, সেটাই প্রমাণিত হলো আবার। অন্যায়কে অন্যায় বলার মতো বাঙালি এখনো আছে, এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে। এ বিজয় যেন বিষাদে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
এখন একটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে, সেটা যেন না হয়। আর যেন কোনো অন্যায়, কোনো অবিচার না হয় এই দেশে। এই দেশটায় আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের ওই স্বাধীনতাটা যেন থাকে।
একটি বিষয় খুবই জরুরি। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে এতগুলো হত্যা হলো, এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল, এগুলোর সঠিক বিচার যেন হয়। সরকার পরিচালনায় যে-ই আসুক, এই বিচার করতেই হবে।আসুন, আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি
—আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী
এখনই সহিংসতা বন্ধ করার ডাক দিচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে, যদি আমাদের হিন্দু ভাইবোন এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করা হয়। আমরা স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু সহিংসতা নিন্দনীয়। এই বিপ্লব অযৌক্তিক আক্রমণের কারণে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। আমরা অনুরোধ করছি, শান্ত থাকুন এবং সেনাবাহিনীকে ছাত্রদের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে দিন, যারা আবারও আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে। আসুন, আমরা এক সাথে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি। দয়া করে সকল ধরনের সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করুন।ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে
—প্রিন্স মাহমুদ, গীতিকার ও সুরকার
এই বিজয় ছাত্রদের, এই বিজয় জনতার বিজয়। মনে রাখা উচিত, সহিংসতার রাজনীতি আর নয়, একেবারেই নয়। এ প্রজন্ম লড়াই করেছে ন্যায্য অধিকার, আর বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। এটা আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। হানাহানি আর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। তাজা প্রাণের এই বলিদানকে মনে রাখতে হবে। এই বলিদান যেন ব্যর্থ না হয়। সংযম চাই, শৃঙ্খলা চাই, মানবিক গণতান্ত্রিক একটা দেশ চাই।
দলীয়করণের পরিণাম আমরা দেখেছি। চাটুকারিতার পরিণাম আমরা দেখেছি। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার পরিণাম আমরা দেখেছি। এ থেকে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা নেওয়া উচিত। কিছুদিন পরেই যেন আমরা এসব ভুলে না যাই। পুরোনো কিছুর মতো নয়, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ চাই।