গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাইসিকিউরিটি কারাগারে থেকে দেয়াল টপকে ২০৯ জন বন্দী পালিয়ে গেছে। এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ছয়জন বন্দী নিহত হন। নিহতদের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন জঙ্গি রয়েছেন।
ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার ঘটলেও আজ বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পালানোর সময় এনকাউন্টারে ছয়জন বন্দী মারা গেছে। এ ছাড়া দেয়াল টপকে দাঙ্গা করে বেড়িয়ে গেছে ২০৯ জন বন্দী। এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।’
নিহতরা হলেন–গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার আসামি নরসিংদীর নলভাটা এলাকার মো. জিন্নাহ (২৮) ও নওগাঁর কাঞ্চনপুর এলাকার আসলাম হোসেন মোহন, একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আফজাল হোসেন (৬৩), হত্যা মামলার আসামি মৌলভীবাজারের রামেশ্বপুরের ইমতিয়াজ পাভেল (২৪), টাঙ্গাইলের তারটিয়া এলাকার স্বপন শেখ (৪০) ও সুনামগঞ্জের জলোশা এলাকার আয়াতুল্লাহ (৩৯)।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের ভেতর একটি মহিলা কারাগারসহ চারটি কেন্দ্রীয় কারাগার রয়েছে। তার মধ্যে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবনসহ দুর্ধর্ষ আসামিরা বন্দী রয়েছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার অনেক নেতা-কর্মীও ওই কারাগারে রয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কারাগারে বন্দীরা কারারক্ষীদের জিম্মি করে মুক্তির দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করেন। পরে কারারক্ষীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আগে থেকে কারা অভ্যন্তরে অল্পসংখ্যক সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করছিল। তারাও বন্দীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে উত্তেজনা বেড়ে গেলে বেলা দেড়টার দিকে অতিরিক্ত সেনা সদস্য হেলিকপ্টার যোগে কারা অভ্যন্তরে এসে বন্দীদের শান্ত করে।
এদিকে কারা অভ্যন্তরে বিদ্রোহের খবর পেয়ে বন্দীদের স্বজনরা সকাল থেকে কারাগারের সামনে অবস্থান করে। এ সময় কারাগারের বাইরে একটি ঝুট গুদামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বুধবার গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লাশগুলো রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে স্বজনেরা লাশ নিতে হাসপাতালে আসেন। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনেরা নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের বিক্ষোভের খবর শুনে কাশিমপুর কারাগার এলাকায় অতিরিক্ত সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও শান্ত আছে।