গতকাল প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, তাঁরা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনস্বত্ব দেশের বাইরে যেতে দেবেন না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফলভাবে আইসিসির এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বলেই আশাবাদী আসিফ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাজটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন সরকারের জন্য।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি মোটাদাগে দুটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। প্রথমত, বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক জায়গায় থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট—খেলোয়াড়, কোচ, আম্পায়ার, কর্মকর্তাসহ সবার যাতায়াত মসৃণ রাখতে ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’ থাকা যাবে না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা, হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশে গভীর দৃষ্টি রেখেছে আইসিসি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রিকেট বোর্ড থেকে দূরে আছেন বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আত্মগোপনে নারী বিভাগের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ বোর্ডের একাধিক পরিচালক। এ মুহূর্তে তাঁদের ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই জানা গেছে। সব মিলিয়ে দেশের অস্থির সময়ে এই বিশাল আয়োজন কীভাবে করবে বিসিবি, তা নিয়ে ঘোর সংশয় আইসিসির।
আইসিসি যেসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে, সেসব নিয়ে বেশি সময়ক্ষেপণ করলেও চলবে না। বিসিবির এক কর্মকর্তা যেমন বললেন, ‘দেশের সব ঠিক হয়ে গেছে, এটা আইসিসিকে ২০-২৫ দিন আগে বললে হবে না। দ্রুতই বলতে হবে। মিলিয়ন ডলারের আয়োজন। হুট করে বললে হয় না। নিজেদের স্থানীয় সূত্র কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন আমাদের দেশের আপডেট পায় ওরা। আইসিসি এখন দুশ্চিন্তায় আছে যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ আয়োজনের মতো অবস্থায় আছে কি না। শেষ মুহূর্তে বললে ভেন্যু পরিবর্তন করা আইসিসির জন্যও অনেক ঝামেলার। অনেক বিষয় আছে এখানে।’
সূত্র জানিয়েছে, টুর্নামেন্ট আয়োজনে বাংলাদেশের পাশে এখন ‘লাল পতাকা’ রেখেছে আইসিসি। পরিস্থিতি উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে এটা দ্রুত ‘হলুদ’, পরে ‘সবুজ’ না হলে টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে বিরত থাকবে আইসিসি। বিকল্প হিসেবে ভারত-শ্রীলঙ্কার নাম শোনা যাচ্ছে। আইসিসিকে আশ্বস্ত করতে এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বিসিবি। চিঠি পাঠানো হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে। এখন যেহেতু দেশে একটি সরকার গঠিত হয়েছে, বিসিবি এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। গতকাল এক পরিচালক যেমন জানালেন, তাঁরা এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আইসিসিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি, নতুন সরকার এসেছে। কদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তারা ভয় পাচ্ছে যে দেশের পুলিশ এখনো স্থিতিশীল হতে পারেনি! আমরা কথা বলেছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।’
আনুষ্ঠানিকভাবে আজ কাজ শুরু হচ্ছে নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টার। তিনি দ্রুতই বিসিবির সঙ্গে বসে জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিতে চান।
যে দুটি বিষয়ে আইসিসি নিশ্চয়তা চাইছে, সেগুলো হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক জায়গায় থাকতে হবে আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হিসেবে খেলোয়াড়, কোচ, আম্পায়ার, কর্মকর্তাসহ সবার যাতায়াত মসৃণ রাখতে ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা’ থাকা যাবে না।