সুস্থ-সুন্দরভাবে মানুষের বসবাসের জন্য নিরাপত্তা জরুরি। নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়া সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কোনোটারই কাঠামো ঠিক রাখা সম্ভব নয়। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করা হয়। পাড়া-মহল্লাতেও অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবস্থাগ্রহণ করে থাকেন।
মানুষের নিরাপত্তা নষ্ট করার কাজগুলো সাধারণত গোপনে রাতের আধারে করার চেষ্টা করেন। এজন্য অনেকেই রাত জেগে পাহাড়ায় নিয়োজিত হন। রাত জেগে পাহাড়ার বিষয়টি ইসলামে প্রশংসার দাবি রাখে এবং যারা রাত জেগে পাহাড়ায় নিয়োজিত হন তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে হাদিসে।
এক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাব না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সংকুল স্থানে পাহারা দেয়, তার আশঙ্কা হয় যে সে হয়তো তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।(মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২৪২৪; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ১২৩২)
কোনো অঞ্চল বা এলাকা রাত জেগে পাহাড়া দেওয়ার জন্য রাতের ঘুম নষ্ট হয়। রাত জেগে কষ্ট করতে হয়। তবে এই কষ্টের জন্য হাদিসে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইবন আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, ‘দুটি চোখকে আগুন স্পর্শ করবে না। এক চোখ যে আল্লাহর ভয়ে কান্না করে। আরেক চোখ যে আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)
অপর এক হাদিসে সাহল ইবনুল হানজালিয়া রা. থেকে বর্ণিত, হুনাইনের যুদ্ধের রাতে নবী সা. বলেন, আজ রাতে কে আমাদের পাহারা দেবে? আনাস ইবনু আবু মারসাদ আল-গানাবি রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি। তিনি বলেন, তাহলে ঘোড়ায় চড়ো।
তিনি তাঁর একটি ঘোড়ায় চড়ে রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাঁকে বলেন, তুমি এ গিরিপথের দিকে খেয়াল করবে এবং এর শেষ চূড়ায় গিয়ে পাহারা দেবে। সাবধান! আমরা যেন তোমার অসতর্কতার কারণে ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোর হলে রাসুলুল্লাহ সা. সালাতের জন্য বেরিয়ে এসে দুই রাকাত (সুন্নত) সালাত আদায় করে বলেন, তোমাদের অশ্বারোহীর কী খবর? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার কোনো খবর অবহিত নই। অতঃপর সালাতের ইকামাত দেওয়া হলে রাসুলুল্লাহ সা. সালাত পড়ালেন এবং গিরিপথের দিকে তাকাতে থাকলেন। সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের অশ্বারোহী এসে গেছে। সাহাবিরা বলেন, আমরা গাছের ফাঁক দিয়ে গিরিপথের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আসছেন। এমনকি তিনি রাসুলুল্লাহ সা. সামনে এসে তাঁকে সালাম দিয়ে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী, গিরিপথের শেষ প্রান্তে গিয়েছি এবং ভোরবেলায় উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, কিন্তু কোনো (শত্রুকে) দেখতে পাইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি কি রাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমেছিলে? তিনি বলেন, সালাত ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া নামিনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি তোমার জন্য (জান্নাত) অবধারিত করেছ, এরপর তোমার কোনো (অতিরিক্ত) নেক কাজ না করলেও চলবে।(আবু দাউদ, হাদিস : ২৫০১)