Friday, November 22, 2024
spot_img
Homeজাতীয়জাদুকরি ভাষণে স্বাধীনতার স্বপ্ন

জাদুকরি ভাষণে স্বাধীনতার স্বপ্ন

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার/ সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:/ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই ‘অমর কবিতখানি’ই হলো বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ।

আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে তখনকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৯ মিনিটের এক জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর ও সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধু সেদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন। ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ময়দানজুড়ে স্লোগান ছিল–‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’।

আগে থেকেই স্বাধীনতার মধ্যে সমাধান দেখছিল আপামর জনতা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো স্বাধীনতাসংগ্রামের রূপরেখা দেন। এই ভাষণে জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানের পাশাপাশি ছিল দিকনির্দেশনাও। বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করতে দেয়নি তখনকার পাকিস্তান সরকার। কিন্তু পরদিন পত্রপত্রিকায় তা ফলাও করে প্রকাশিত হয়। দৈনিক সংবাদ-এ আট কলামজুড়ে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘এবার স্বাধীনতার সংগ্রাম: মুজিব’। মূল শিরোনামের ওপরে কিছুটা ছোট অক্ষরে লেখা ছিল ‘সামরিক আইন প্রত্যাহার ও গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিলেই পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিব কি না, ঠিক করিব’। ৮ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘পরিষদে যাওয়ার প্রশ্ন বিবেচনা করতে পারি, যদি—’। শিরোনামের নিচে বাঁ দিকে চার কলামজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ডানে চার কলামে আরেকটি শিরোনাম ‘আজ থেকে আমার নির্দেশ—’, ছবির নিচে ছিল ‘ঢাকা বেতার বন্ধ’ এবং জয় জনতার জয়’। নিচে আট কলামজুড়ে জনতার ছবি।

বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠেই জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির কণ্ঠে ‘তোমার দেশ আমার দেশ/ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা/ শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ ধ্বনিত হয়। বঙ্গবন্ধু দরাজ গলায় তাঁর ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…।’

২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে। ২৫০০ বছরে ৪১ জন জাতীয় বীরের বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ডের লেখা ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিস: দ্য স্পিস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’ গ্রন্থেও ভাষণটি স্থান পেয়েছে।

সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ তথা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। জবাবে ক্ষুব্ধ বাঙালি রাজপথে নেমে আসে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয়েছিল, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দেন। বাঙালি নতুন প্রেরণা খুঁজে পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

কর্মসূচি: দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে—ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া বিকেল ৪ টায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে আলোচনা সভা হবে।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments