কাটার মাস্টার, সাতক্ষীরার সায়েনাইড, ফিজ– আরও কত নামে ডাকা হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে! এত নাম থাকা সত্ত্বেও গত ডিসেম্বরের নিলামে কেনার পর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস নতুন নাম দিয়েছে বাঁহাতি এ পেসারের। অস্ট্রিয়ার অমর সুরকার আমাদেয়ুস মোৎসার্টের নাম অনুসরণ করে ‘মুজ-আর্ট অব মাদ্রাজ’ রেখেছে তারা। মুস্তাফিজ এই নামের মর্যাদা রাখতে পারবেন তো?
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সে সম্ভাবনা খুবই কম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি২০ সিরিজে তো দলে তাঁর জায়গা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সিরিজ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছে, মুস্তাফিজ ‘অটোচয়েজ’ কিনা?
কোনো একটা বিষয়কে শিল্পের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেলেই সাধারণত মোৎসার্টকে টানা হয়। এই যেমন ভারতের অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমানকে বলা হয় ‘মোৎসার্ট অব মাদ্রাজ’। সেই ২০১৫ সালে অভিষেকেই কাটারকে যেভাবে দুর্ভেদ্য করে তুলেছিলেন, সেটা শিল্পের পর্যায়েই বলা চলে। পরের আইপিএলে গিয়ে এই স্লোয়ার কাটারে রীতিমতো মাত করে দিয়েছিলেন তিনি। ছিল দুর্দান্ত সব ইয়র্কার। আন্দ্রে রাসেলকে ভূপাতিত করে স্টাম্প উড়ানোটা তো অনেক দিন আইপিএলে প্রমো হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর হাতের কবজির মোচড়ে যেন বিষাক্ত বাণ বের হতো।
সেই ভয়ানক কাটার তো দূরের বিষয়, এখন ঠিকঠাক লাইন-লেন্থেই বল ফেলতে পারেন না মুস্তাফিজ। মাঝেমধ্যে স্লোয়ার দিতে গিয়ে উইকেটের মাঝখানে বল ফেলে দেন। দীর্ঘদিন ইয়র্কার দিতে দেখা যায় না তাঁকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে ৩ ম্যাচে ১২ ওভার বোলিং করে মোট ১৩১ রান দিয়ে মাত্র ২ উইকেট নিয়েছেন। প্রতি ম্যাচেই চল্লিশের ওপরে রান দিয়েছেন, ওভারপ্রতি ১০.৯১ করে। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু যেটা লাগে, ব্যাটাররা অবলীলায় চার-ছয় মারলেও তাঁর মাঝে কোনো হেলদোল দেখা যায় না। ভালো করার কিংবা ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়নাটা একেবারেই দেখা যায় না এখন মুস্তাফিজের ভেতর।
তাই তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারের পর গত শনিবার সিলেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়– মুস্তাফিজ কি অটোচয়েজ? অধিনায়ক যদিও স্পষ্ট ভাষায় সেটি উড়িয়ে দেন, ‘এই দলে কেউই অটোচয়েজ না। আমি জানি না, কারা এই অটোচয়েজ বানায়।’
মুস্তাফিজের বোলিং ব্যয়বহুল হওয়ার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শান্ত, ‘আমার মনে হয়, মুস্তাফিজ সবচেয়ে কঠিন ওভারগুলো করে। প্রতি ম্যাচেই যে ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ, যখন সেট ব্যাটার, তখন সে বোলিং করে। স্বাভাবিকভাবেই সে রান দেবে। উইকেটও নিচ্ছে কিন্তু। তবে হ্যাঁ, শুরুটা যেভাবে করেছিল, সে এখন তেমন নেই, একটু উনিশ-বিশ হচ্ছে। তাই বলে তাকে নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কোনো খেলোয়াড়কে নিয়েই আলাদাভাবে চিন্তা করছি না। তো মুস্তাফিজকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না।’
অধিনায়কের পাশে দাঁড়ানোটা স্বাভাবিক। তবে ধারাবাহিকভাবে এমন বাজে বোলিং করলে অবশ্যই বিকল্প চিন্তা করা উচিত টিম ম্যানেজমেন্টকে। তানজিম হাসান সাকিব, হাসান মাহমুদদের মতো উঠতি পেসাররা তো রয়েছেন।