Thursday, September 19, 2024
spot_img
Homeখেলাধুলাবিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, ফিলিস্তিনের ফুটবল টিকে আছে’

বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, ফিলিস্তিনের ফুটবল টিকে আছে’

ফিলিস্তিনে নাকি বোমা পড়ছে, তাহলে ওরা বাংলাদেশে খেলতে এল কীভাবে? ওরা বেঁচে আছে কীভাবে?’ কিংস অ্যারেনায় যাওয়ার পথে ভাড়ায় বাইকচালকের কণ্ঠে চরম বিস্ময়! বসুন্ধরার এই মাঠে যে আগামীকাল বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে আতিথ্য দেবে সেটা জানা ছিল না সেই বাইকচালকের। তবে একটু পরেই তাঁর বিস্ময় কেটে গেল, যখন শুনলেন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন! গণমাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার কথা জেনেছেন, শুনেছেন সেখানে প্রতিনিয়ত বোমা হামলায় মারা যাচ্ছেন শিশু থেকে শুরু করে হাজার হাজার নর-নারী। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে কোনো দল ফুটবল খেলতে পারে, সেটা জানা ছিল না সেই বাইকচালকের।

শুনতে অবাস্তব ঠেকলেও এটাই এখন বাস্তবতা। গাজায় আটকে থাকা ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষেরা জানেন না পরদিন আরেকটি সকাল দেখতে পাবেন কি না। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষায় বোমা-বুলেটকে আলিঙ্গন করে নেওয়ার। চার দিন আগে ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা যখন বাংলাদেশের জালে গোল দিচ্ছেন, তখন হয়তো ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কোনো না কোনো ফিলিস্তিনি। সে হামলায় হয়তো প্রাণ হারিয়েছে ভবিষ্যতে ফুটবলার হতে চাওয়া কোনো নিষ্পাপ শিশুও।

ইসরায়েলি গণহত্যায় স্বজন হারানোর ব্যথাটা সবচেয়ে ভালো জানার কথা ফিলিস্তিনি ডিফেন্ডার মোহামেদ সালেহর। বর্তমান জাতীয় দলটায় তিনিই একমাত্র ফুটবলার যার জন্ম হয়েছে গাজায়। তবে আজ সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন দলের কোচ মাক্রাম ডাবু সালেহকে আনেননি, এনেছেন পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম নেওয়া মোহাম্মেদ রশিদকে। ইংলিশে পারদর্শিতা থাকায় রশিদ একই সঙ্গে কোচের অনুবাদকের কাজ করেছেন।

আজ ফিলিস্তিনের সংবাদ সম্মেলনে যতটা ফুটবল নিয়ে কথা হলো, তার চেয়ে খানিকটা বেশি হয়েছে ফুটবলারদের আবেগ, গাজায় মানুষদের দুর্দশা নিয়ে। ফিলিস্তিনি ফুটবলাররাও এতে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যুদ্ধের কারণে নিজেদের মাটিতে খেলতে না পারলেও যেকোনো দেশেই ফিলিস্তিনের জন্য অন্য দেশের মানুষের সমর্থনটাও কম নয়। সমর্থনটা আছে বাংলাদেশেও। মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচে যেমন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ পতাকা উড়েছিল বাংলাদেশে। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে দৌড়েছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ।

কোচের হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন রশিদ। বলেছেন, ‘লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচে আমরা দেখেছি, স্টেডিয়াম ছেয়ে গেছে ফিলিস্তিনের পতাকায়। বাংলাদেশি সমর্থকদের এ জন্য আমরা হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও আমরা একই সমর্থন পেয়েছি।’

গাজায় পরাভূত ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এই মানুষদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলার প্রত্যয় ফিলিস্তিনি ফুটবলারদের। তাদের সেরাটা দেখা গিয়েছিল জানুয়ারিতে, এশিয়ান কাপে। সেবার প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে খেলেছে ফিলিস্তিন। বিশ্বকাপ বাছাইয়েও তেমন কিছু করতে চায় ফিলিস্তিন।


সংবাদ সম্মেলনের শেষে বিশ্বকে একটা বার্তাও দিয়েছেন রশিদ। কী সেই বার্তা? রশিদ বললেন, ‘একজন ফিলিস্তিনি ফুটবলার হিসেবে আমাদের বার্তা সহজ এবং পরিষ্কার, এই পৃথিবীর একজন সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও ফুটবল খেলার অধিকার আছে। আমরাও স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। এটা সবার জন্য অনেক বড় একটা বার্তা যে আমাদের যেন পেছনে ঠেলে না দেওয়া হয়। যতই প্রতিবন্ধকতা আসে, আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠি, এখন যেমন হচ্ছি।’

এত হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ফিলিস্তিনি ফুটবলাররা ইতিবাচকতা খুঁজে পেয়েছেন বলে জানালেন রশিদ, ‘গাজায় যা হচ্ছে তার মধ্যেও একটা ইতিবাচকতা আছে, আর সেই ইতিবাচকতা হচ্ছে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্বে আমরা খেলতে চাই। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই ফিলিস্তিনের ফুটবল টিকে আছে, এত কিছুর পরও ফিলিস্তিন জাতীয় দল উন্নতি করছে। আমরা বিশ্বের সবাইকে যে বার্তা দিতে চাই সেটা হলো, কখনো পেছনে ফেরা যাবে না, কখনো হাল ছাড়া যাবে না, সব সময় স্বপ্নের পেছনে ছোটেন এবং স্বাধীনভাবে বাঁচুন।’

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments