গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহর। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জিম্মি ইলাদ কাৎজির মরদেহ উদ্ধার করার পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
আয়োজকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ইসরায়েল জুড়ে প্রায় ৫০টি স্থানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এসব সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষ যোগ দেন। তাঁরা সরকারে পদত্যাগের পাশাপাশি জিম্মি মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবি জানান। নেতানিয়াহুর সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের সর্বশেষ ঘটনা এটি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন চাই’ এবং ‘ইলাদ, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী’ নামে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ তেল আবিবের সমাবেশকে জোর করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারবিরোধীদের এই বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবশিষ্ট ১৩০ জিম্মি উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতার কারণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এর আগে গতকাল শনিবার ইসরায়েলি জিম্মি ইলাদ কাৎজির মরদেহ উদ্ধার করে আইডিএফ। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলার সময় তাঁকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। গত জানুয়ারিতে জিম্মিদের প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাঁকে জীবিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল।
বিক্ষোভকারী নোয়াম পেরি বিবিসিকে বলেন, ‘বন্দী অবস্থায় ইলাদ কাৎজির তিন মাস পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তাঁর আজ আমাদের মধ্যে থাকা উচিত ছিল। তিনি আজ আমাদের সঙ্গে থাকতে পারতেন।’
আয়োজকেরা বলছেন, বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলজুড়ে প্রায় ৫০টি স্থানে বিক্ষোভ করেছেন। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের সর্বশেষ ঘটনা এটি।
তেল আবিবে বিক্ষোভকারীদের ওপর হঠাৎই একটি গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার কারণ এখনো অস্পষ্ট।
আজ রোববার হামাস হামলার ঠিক ছয় মাস পরে মধ্যস্থতাকারীরা আবারও যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে বৈঠকে বসবেন। কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, মিসর, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এ বৈঠকে যোগ দেবেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক বিল বার্নস ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন কাৎজির বোন কারমিত পালতি কাৎজি। পোস্টে তিনি লেখেন, সরকার যদি নতুন শান্তিচুক্তিতে সম্মত হতো, তবে আজ তাঁর ভাই জীবিত ফিরে আসতেন।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমাদের নেতারা কাপুরুষ আর রাজনৈতিক স্বার্থে অন্ধ। তাই এখন পর্যন্ত কিছু হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধবাজ মন্ত্রিসভা এবং জোটের সদস্যরা: নিজেকে আয়নায় দেখুন এবং বলুন আপনার হাতে রক্ত লেগে নেই।’
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হয় এবং এর বেশির ভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
এরপর থেকে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি হিসেব অনুসারে, হামাস হামলার সময় ২৫৩ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপহরণের পর প্রায় ১২৯ জন জিম্মি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১২ জন জিম্মির লাশ উদ্ধার করেছে আইডিএফ।