ভারত থেকে ধেয়ে আসা উজানের ঢল আর বৃষ্টির পানিতে যৌবন ফিরেছে রাক্ষুসে তিস্তা নদীর। পানিতে টইটম্বুর তিস্তাপাড়ে এখন চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। নদীর পেটে পানির উচ্চতা কখনো কমছে আবার বাড়ছে। পানি বাড়া-কমার সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন। গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর বন্যার সময় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন মোকাবিলার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয়রা।
এবার রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে ভাঙনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশু শিক্ষার আঁতুরঘরটির চারদিকে অথৈ পানি। এর তিন পাশে ভাঙন এসে ঠেকেছে ১০ মিটারে। জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়টি রক্ষা হলেও ভাঙন ঝুঁকি কাটছে না। যেকোনো সময় জিও ব্যাগ ধসে বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে বিলীনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এ গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি গড়ে ওঠেনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এই গ্রামের তিন ভাগের দুই ভাগ আগেই বিলীন হয়েছে তিস্তায়। বাকি অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে ছোট হয়ে আসছে। এই গ্রামেই অবস্থিত চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছিল। পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারও বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙন এখন বিদ্যালয়ের একদম কাছে এসে পৌঁছেছে।
বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও ভাঙন রোধে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। সেটিও তীব্র স্রোতের কারণে ধসে গেছে। তাই স্থানীয়রা নিজেরাই বাঁধটি রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সময়মতো উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাড়িঘরও রক্ষা পেত। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ছাওলার ১০ নম্বর বোল্ডারের পাড় থেকে আরও তিন কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এ গ্রামগুলো রক্ষা পেত। কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১ নম্বর ও ২ নম্বর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পাড়ের গ্রামগুলো বন্যা ও নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাই প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এখানে গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় চার হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।