আজ মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক শুরু হবে। দুই সপ্তাহের একাধিক বৈঠকের পর এই বিতর্ক শুরু হবে। জাতিসংঘের বার্ষিক আয়োজনের মধ্যে এই বিতর্কের প্রতি নজর থাকে বিশ্ববাসীর। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে জড়ো হবেন বিশ্বের ১৪০ জনের বেশি নেতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি। বিশ্ব জলবায়ু সংকট ও ইউক্রেনে যুদ্ধ এবারের অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিতর্কে বিশ্বনেতারা আগামী বছরের জন্য তাদের অগ্রাধিকার তুলে ধরার সুযোপ পান। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সহযোগিতার আহ্বান জানান। কখনও কখনও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমালোচনা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, এটি হলো এমন একটি মুহূর্ত যখন প্রতি বছর বিশ্বের সব প্রান্তের নেতারা শুধু যে বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন তা নয়, সাধারণ কল্যাণের জন্য কাজ করেন। এই মুহূর্তের বিশ্বের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এবারের সাধারণ বিতর্ক ‘আস্থা পুনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনরুজ্জীবিত করা : সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং স্থায়িত্বের দিকে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিত করা’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সম্মেলন চলাকালে একাধিক পার্শ্ববৈঠক ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্র মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিষয় নিয়ে বিতর্কে অংশ গ্রহণ করে। বিভিন্ন প্রস্তাব ও ঘোষণা গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে এই পরিষদের। যেগুলো সংস্থাটির নির্দেশনা নীতি হওয়ার কথা।
জাতিসংঘ সনদ অনুসারে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেসব ইস্যু নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করা হচ্ছে না সেগুলো সমাধানের দায়িত্বও রয়েছে এই পরিষদের।
সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিষদের ছয়টি কমিটির মধ্যে একটি বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনের অর্থায়নের বিষয়টি সরাসারি দেখভাল করে।
সাধারণ বিতর্কে কারা কথা বলবেন? সাধারণ বিতর্কের প্রথম ভাষণ দিয়ে থাকেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট। এই অধিবেশনের নেতা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ডেনিস ফ্রান্সিস তিনি বলেছেন, তার মেয়াদে বৃহত্তর বহুমুখিতা ও সমান সুযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সাধারণত প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিল ভাষণ দিয়ে থাকে। দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা এবার তার ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দিতে পারেন। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করা লুলা অঙ্গীকার করেছে পরিবেশ ইস্যুতে ব্রাজিলকে পুনরায় বৈশ্বিক নেতার আসনে নিয়ে যাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ আমাজন বনের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য।
এরপর ভাষণ দেয় স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈশ্বিক নেতা হিসেবে ওয়াশিংটনের ভূমিকা তুলে ধরতে চেষ্টা করবেন।
এরপর বক্তা নির্ধারিত হয় জটিল হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে। প্রতিনিধিত্ব, ভৌগোলিক ভারসাম্য ইত্যাদি বিবেচনা একের পর এক নেতা ভাষণ দেবেন।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছিলেন, উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় ১৫০ জন নেতা উপস্থিত হতে পারেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে পারেন। একই সঙ্গে তারা বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পার্শ্ব বৈঠকও মিলিত হবেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, জেলেনস্কি বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে পারেন। এ সময় তিনি হয়তো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে একই টেবিলে বসতে পারেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শীর্ষনেতা হিসেবে শুধু বাইডেন উপস্থিত থাকবেন। ভেটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে উপস্থিত থাকতে পারে।
এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকবেন ঋষি সুনাক। তিনি বলেছেন, ব্যস্ত সূচির কারণে তিনি নিউ ইয়র্ক যেতে পারছেন না। সূচির কথা উল্লেখ করে অনুপস্থিত থাকবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
অধিবেশনে চীনের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন তা স্পষ্ট নয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি এর পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হতে পারে।
কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে? সাধারণ বিতর্কে সাধারণত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছরের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা। চলতি বছরেও এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগস্টের শেষ দিকে মার্কিন দূত টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছিলেন, তিনি প্রত্যাশা করছেন বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে চাপ জোরদার করবে।
চীনকে নিয়ে উদ্বেগ, প্রশান্ত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত এবং মানবাধিকার ইস্যুও সামনে আসতে পারে। বিশেষ করে অনেক বিশ্লেষক জাতিসংঘে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আফ্রিকায় সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থান মনোযোগ পেতে পারে। এছাড়া সুদান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক সংঘাত, আফগানিস্তানে মানবিক সংকট, বৈশ্বিক অভিবাসী সংকটে হর্ন অব আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ভূমিকাও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮ শুরু হওয়ার দুই মাস আগে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অধিবেশনের পার্শ্ব আয়োজন হিসেবে একটি জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করছেন নিউ ইয়র্কে। সাধারণ বিতর্ক জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সূত্র : আল জাজিরা