Thursday, May 9, 2024
spot_img
Homeশিক্ষারফিক-জব্বার হলের দেয়াল নিয়ে জাবির অন্য দুই হলের সঙ্গে সংঘর্ষ

রফিক-জব্বার হলের দেয়াল নিয়ে জাবির অন্য দুই হলের সঙ্গে সংঘর্ষ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হলসংলগ্ন পথের মাঝে নির্মিত দেয়াল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দফায় দফায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পেট্রলবোমা ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (পৌনে ১২টা) সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, নিরাপত্তা শাখা এবং আশুলিয়া-সাভার থানার অর্ধশতাধিক পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ রফিক-জব্বার হল, শেখ রাসেল হল ও শহীদ তাজউদ্দীন হলের মাঝে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি দেয়াল নির্মাণ করা হয়। দেয়ালটি চারটি দাবিতে নির্মাণ করেন শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্ররা। এতে পথচলায় বিড়ম্বনা পোহাতে হয় অন্য দুটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রফিক জব্বার হলের বিরুদ্ধে শেখ রাসেল ও তাজউদ্দীন হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে ওই দেয়ালের একদিকে রফিক জব্বার হলের ছাত্ররা ক্রেন দিয়ে গর্ত খোঁড়া শুরু করলে সাড়ে ১১টা থেকে আবারও দু-পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেয়াল ভাঙা নিয়ে দুই হলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে উভয় হলের মধ্যে কয়েক দফায় ইট-পাটকেল ও পেট্রলবোমাসদৃশ আগুন নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।

গতকাল রাতে সংঘর্ষের বিষয়ে মুসা আহমেদ নামে এক জাবি শিক্ষার্থী বলেন, ‘মূলত রফিক-জব্বার হলের নির্মিত দেয়ালের কারণে দুই হলের ছাত্রদের ব্যাপক অসুবিধা হয়। আসন্ন রমজান মাসেও আমাদের খাবার খেতে অনেক পথ ঘুরে বটতলায় যেতে হবে। এ কারণে শেখ রাসেল ও তাজউদ্দীন হলের ছাত্ররা দেয়াল ভাঙতে গেলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে দেয়ালটি ভাঙার দাবিতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করেন শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেয়াল ভাঙার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেয়ালটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি অঙ্কনের চেষ্টা করেন রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। সে সময় শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি অঙ্কনে বাধা দেন।’

আহত ছাত্রদের মধ্যে রফিক-জব্বার হলের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ও নিশাত গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নিয়ে হলে ফিরে গেছেন।

সংঘর্ষের বিষয়ে রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র ইমরান শাহরিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ‘শেখ রাসেল হলের এই ছোট ভাইগুলোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি পরীক্ষার আগের রাতে এমন বিভীষিকাময় একটি নির্ঘুম রাত্রি উপহার দেওয়ার জন্য। গ্যাঞ্জাম চলতেছে হলের বাইরে রাস্তায়। অথচ ছেলেগুলা ইট মারতেছে হলের জানালা বরাবর। যে রুমেই লাইট জ্বলতে দেখছে, সেই রুম লক্ষ্য করেই ইট ছুঁড়তেছে শেখ রাসেল হলের দোতলা আর দশম তলার ছাদ থেকে। একটা জানালা ভাঙলেই বিকট চিৎকার দিয়ে উল্লাস করে উঠছে। কাউকে রুমেও বসে থাকতে দিচ্ছে না। আমার রুম নম্বর ৪২৭। আমার রুমের মতো জব্বার ব্লকের পাঁচটা ফ্লোরের প্রায় ৮০টা রুমের জানলা ভেঙে চুরমার করে ফেলছে।’ এদিকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে শহীদ রফিক-জব্বার হল ও শেখ রাসেল হলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও শেখ রাসেল হল প্রশাসনের কেউই ঘটনাস্থলে আসেননি। তাঁরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন।

এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার বলেন, ‘একটা ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। পরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে এসেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি।’

শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে হলে আসি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই হলের রাস্তার মধ্যবর্তী একটি দেয়ালকে কেন্দ্র করে মূলত সংঘর্ষের শুরু। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন, তবে তাঁদের থামানো যাচ্ছিল না। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি।’

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments