Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeজাতীয়বিজিবি স্কুলে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যের আশ্রয়, ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত

বিজিবি স্কুলে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যের আশ্রয়, ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত

রাখাইনের মন্ডু জেলা শহর থেকে টহলে বের হওয়া জান্তা বাহিনীর ২ শতাধিক সদস্যের ওপর কমান্ডো হামলার পর পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১৭৯ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরস্থ ১১ বিজিবির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে তাঁদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ স্কুলে অবস্থানের কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল আজ মঙ্গলবার। আশ্রিত স্থানান্তরে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পাঠদান নিয়েই এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। স্কুলটিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

এদিকে সোমবার বিকেলে মিয়ানমার অংশ থেকে বাংলাদেশের অত্যন্তরে ছুটে আসা গুলিতে আহত ইউপি সদস্য সাবের আহমদের কোমরের পেছনের অংশ থেকে একটি বুলেট অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। বিষয়টি আজ সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী নিজেই। ইউপি সদস্য সাবের আহমদ বলেন, বুলেটটি বের করার পর প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। অর্থ সংকটে ওষুধও কিনতে পারছেন না।

জামছড়ি সীমান্তের অধিবাসী আবদুচ্ছবি, জহির আলম ও কালাম বকসু আজ বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, সকালেও জামছড়ি ও আশারতলী গ্রাম থেকে ওপারের রানী এলাকায় গোলাগুলির ব্যাপক আওয়াজ পাওয়া গেছে। তাঁরা কাঠ কাটতে যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে গুলির আওয়াজ পান। পরে ভয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

পালিয়ে আসা জান্তা সদস্য টুয়ো মং (৪২) সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা ২ শতাধিক সেনা সদস্য বিদ্রোহী দমনে টহলে বের হন গত ১০ মার্চ বিকেলে। বলিবাজার সেনা ব্যাটালিয়নে ১১ মার্চ রাত্রিযাপন করার কথা ছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আরকান আর্মির কমান্ডোরা অতর্কিত হামলা করে। রানী ও অংচাপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ–পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার গহিন বনে তাঁরা আক্রমণের শিকার হন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে ওপরের নির্দেশে তাঁরা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। ২০০ সদস্যের ১৭৯ জন বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। বাকি ২১ সদস্য সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে আছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যকে ১১ বর্ডার গার্ড বিজিবির ব্যাটালিয়ন সংলগ্ন বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁদের বিদ্যালয়ে আনা হয়। বেঞ্চ সরিয়ে বিছানা পেতে তাঁদের রাখা হয়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একটি সূত্র জানায়, আজ দুপুরে তাঁদের বিরিয়ানি ও মুরগি মাংস খাওয়ানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিয়ানমার বাহিনীর ১৭৯ সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জারুলিয়াছড়ির আগা ও জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে তিন দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে তাঁদের নিরস্ত্র করে বিকেলে ২৯ জনকে এবং রাতে ১৫০ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের মধ্যে আহত চারজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে সীমান্তের ওপারে আটকে পড়েছেন ২১ সদস্য। রাখাইনের উত্তরাংশের রানী অংচেপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ–পশ্চিমে ডেইংগ্যার পাহাড় নামক জান্তার পরিত্যক্ত ঘাঁটি ঘিরে রেখেছে আরকান আর্মি কমান্ডোরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুজাহিদ উদ্দিন  বলেন, মিয়ানমার বাহিনীর ১৭৯ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ির বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চালানো হবে।

প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি রমজানে স্কুল বন্ধ রাখা নিয়ে রিটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্কুল খোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় রমজানের প্রথম ১০ দিন খোলা থাকবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনাকে অন্যত্র সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। তা না হলে স্কুলের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে।

এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতণ চাকমা বলেন, ‘১১ বিজিবি অধিনায়কের প্রস্তাবেই তাঁদের (সেনা সদস্য) বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। কারণে আজ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাঁরা এখানে যে কয়দিন তাঁরা থাকবেন সে পর্যন্ত হয়তো এভাবেই থাকবে। আগামী ১০ রমজানের পর স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যসহ ৩৩০ জন সেনা। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ–বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাঁদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়। আর ১১ মার্চ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন আরও ১৭৯ জন।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments