Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeবিশ্ব১৯ এপ্রিল শুরু ভারতের সাত পর্বের লোকসভা ভোট, ফল ৪ জুন

১৯ এপ্রিল শুরু ভারতের সাত পর্বের লোকসভা ভোট, ফল ৪ জুন

সাতটি পর্বে এবার লোকসভা নির্বাচন হবে ভারতে। ভোট শুরু ১৯ এপ্রিল, সপ্তম পর্বের ভোট হবে ১ জুন। প্রথম পর্বের ভোট হবে ১৯ এপ্রিল। দ্বিতীয় পর্ব ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় পর্ব ৭ মে। চতুর্থ পর্বের ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম পর্বের ভোট হবে ২০মে। ষষ্ঠ পর্বের ভোট হবে ২৫ মে। সপ্তম পর্বের ভোট ১ জুন। সবমিলিয়ে ভোটপর্ব চলবে ৪৭ দিন ধরে।

ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হবে ৪ জুন। ১৬ জুন চলতি লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তার মধ্যেই নতুন লোকসভা তৈরি করতে হবে।

শনিবার দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনের প্লেনারি হলে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা কমিশনের ফুল বেঞ্চ। এদিন একই সঙ্গে উড়িষ্যা সিকিম অরুণাচল প্রদেশ এবং বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুই নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধু।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, নতুন ভোটার প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ। যুব ভোটারের (২০-২৯ বছর বয়সি) সংখ্যা ১৯.৭৪ কোটি। এবার ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারের সংখ্যা ৮২ লক্ষ। মোট পুরুষ ভোটার ৪৯.৭০ কোটি। এ বছর মহিলা ভোটার ৪৭.১০ কোটি। তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ। এ বছর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে ৫৫ লক্ষ। ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মী মিলিয়ে সংখ্যাটা ১.৫ কোটি। ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারলে সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

রাজীব কুমার বলেন, দেশজুড়ে একাধিক রাজ্যের ২৬টি, কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচন নেওয়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশে ১৭৫ আসনে এক দফায় ভোট নেওয়া হবে ১৩ মে। ওড়িশায় ১৪৭ আসনে চার দফায় আগামী ১৩, ২০, ২৫ মে এবং ১ জুন ভোট নেওয়া হবে। সিকিমে ৩২ আসনে এক দফায় আগামী ১৯ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে। অরুণাচল প্রদেশে ৬০ আসনের জন্য আগামী ১৯ এপ্রিল। সব ক্ষেত্রেই ভোট গণনা হবে আগামী ৪ জুন।

রাজীব কুমার বলেন, ‘ভোটে যতদূর সম্ভব কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে। কোনও রাজ্যেই কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সোশাল মিডিয়া, টেলিভিশনের মাধ্যমেও নজর রাখা হবে। অ্যাপের মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ১০০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করা হবে।’

সাত দফার ভোটের অঞ্চল

সাত দফায় ভোটের অঞ্চলগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল)- পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ

দ্বিতীয় দফা (২৬ এপ্রিল)- কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা

তৃতীয় দফা (৭ মে)- জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলী ও দমন-দিউ

চতুর্থ দফা (১৩ মে)- মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড

পঞ্চম দফা (২০ মে)- লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র

ষষ্ঠ দফা (২৫ মে)- দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা

সপ্তম দফা (১ জুন)- হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা

সাতদফায় নির্বাচন করানো নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দেশের ভৌগোলিক চিত্র দেখুন, নদী থেকে পাহাড় মরুভূমি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কথা ভাবুন। তাদের উপর কি চাপ দেখুন? ২-৩ দিন সময়ের মধ্যে তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হবে। তার মাঝে দোল উৎসব, রামনবমী সহ একাধিক উৎসব রয়েছে। এইসব কথা ভেবেই নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করতে হয়।’

গোটা দেশের মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অন্ধ্রপ্রদেশ, চন্ডিগড়, দাদরা ও নগর হাভেলি, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখ, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, পদুচেরি, সিকিম, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ড- এই ২২ রাজ্যে এক মাত্র দফায় ভোট নেওয়া হবে। কর্ণাটক, রাজস্থান, ত্রিপুরা ও মণিপুর এই ৪ রাজ্যে দুটি দফায় ভোট নেওয়া হবে। ছত্তিশগড় এবং আসাম-এই ২ রাজ্যে তিনটি দফায় নির্বাচন হবে। ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খন্ড-এই ৩ রাজ্যে চারটি দফায় নির্বাচন হবে। মহারাষ্ট্র, জম্মু ও কাশ্মীরে পাঁচটি দফায় নির্বাচন হবে। সর্বাধিক সাত দফায় নির্বাচন নেওয়া হবে তিনটি রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তর প্রদেশে।

এ বিষয়ে রাজীব কুমার বলেন, যে রাজ্যগুলিতে ৭ দফায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে লোকসভা আসন সংখ্যা বেশি, কেন্দ্র বেশি।

বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ জুন। সেক্ষেত্রে ওই সময়সীমার আগেই নতুন লোকসভা গঠন করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৪২ লোকসভার আসনে ভোট নেওয়া হবে সাত দফায়। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হবে- জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার  কেন্দ্রে। ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে। ৭ মে তৃতীয় দফায় মালদহ উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে। ১৩ মে চতুর্থ দফায় বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম কেন্দ্রে। ২০ মে পঞ্চম দফায় বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, শ্রীরামপুর, হুগলি, উলুবেরিয়া ও আরামবাগ কেন্দ্রে। ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় তমলুক, কাঁথি, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। ১ জুন সপ্তম ও শেষ দফায় দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতার উত্তর কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে।

শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মোট ৭ দফায়- ১১ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। যদিও তার আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৯ দফায়।

ইতিমধ্যেই বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম সহ একাধিক দল বেশ কিছু আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয় নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় পেয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তারা প্রায় ৩০৩ টি আসন, আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ আসনে জয় পায়। ওই নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ছিল ৩৭.৩৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৮৯ সালের পর কোন একটি রাজনৈতিক দল এত বেশি ভোট পায়। অন্যদিকে ওই নির্বাচনে মাত্র ৫২ টি আসনে জয় পেয়েছিল শতাব্দি প্রাচীন দল কংগ্রেস, আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ৯৮ আসনে জয় পায়।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments