জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মিমের মুখোমুখি হলেন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন। মিম এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের শরণাপন্ন হওয়ার পরদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
আজ বুধবার বিকেলে দুই শিক্ষক ও অভিযোগকারীকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে ডেকে নেয় পুলিশ। কথাবার্তা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দু’পক্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে।
সেখানে যৌন হয়রানির অভিযোগকে ‘কাল্পনিক’ বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্ত জবির ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ঘটনার কথা উল্লেখ করে ২০২২ সালে কাল্পনিক একটি অভিযোগ দেয় ওই শিক্ষার্থী। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যাকার্ড আন্দোলন হয়েছে। এ ঘটনায় মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে যাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে ডিবি ডেকেছিল। তারা (ডিবি) যা জানতে চেয়েছে সব তথ্য দিয়েছি।
বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, এখানে দুই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে আদালতে কার্যক্রম চলছে। তাই এ নিয়ে কথা বলতে পারছি না।
ভাইভা পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ও (ভুক্তভোগী ছাত্রী) ঠিকমতো ক্লাসে আসত না। দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটি কোর্সে অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থিতি মিলিয়ে ৪০ মার্ক থাকে। সে এটার কোনো কার্যক্রমে যোগ দেয়নি। ফলে সে শূন্য পেয়েছে। সপ্তম সেমিস্টারেও চারটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়নি। ফলে সব মিলিয়ে ২৩ পেয়েছিল। যেহেতু ৪০ মার্কে পাস, তাই ফলাফল শিটে শূন্য এসেছে।
এ সময় অভিযোগকারী কাজী ফারজানা মিম বলেন, তারা (শিক্ষক) শূন্য দেওয়ার বিষয়ে বানোয়াট কথাবার্তা বলেছেন। পরীক্ষা দিয়েছি; কিন্তু তারা আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এ ঘটনা যৌন হয়রানির অভিযোগেও উল্লেখ করেছি।
দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মিম ডিবির কাছে আবদার করেছে, সে যেন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। বিষয়টি শিক্ষকদের বলেছি। তারা বলেছে, তাকে বিরক্ত করা হবে না।
এদিকে, জবি শিক্ষার্থী মিমের যৌন হয়রানির অভিযোগ এবার রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে। গত মঙ্গলবার বঙ্গভবনে গিয়ে দিয়ে আসা আবেদনে রাষ্ট্রপতির কাছে যৌন নিপীড়ন ও বুলিংয়ের বিচার চেয়েছেন তিনি। আবেদনে মিম লিখেছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে উপাচার্য বরাবর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বুলিং ও যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে একটি আবেদন করি। বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর তখন যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বে ছিলেন। এটার বিচার আমি এখনও পাইনি, উল্টো আমাকে যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক ও তার সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান, অনার্স পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায়, আপনার (রাষ্ট্রপতি) কাছে সর্বশেষ আশা-ভরসা নিয়ে আবেদন জানাচ্ছি।