Saturday, April 27, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ড. ইউনূসের ‘ইউনেস্কো’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

ড. ইউনূসের ‘ইউনেস্কো’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ইউনেস্কো’র ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ইউনূস সেন্টার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সম্মাননা পাওয়ার কথা জানায়। এতে বলা হয়, একাদশ গ্লোবাল বাকু সম্মেলনের শেষ দিনে ড. ইউনূসের হাতে ‘দ্য ট্রি অব পিস’ তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স- এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টেও তাঁর এই পুরস্কার পাওয়ার কথা জানানো হয়।

তবে এ খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছে ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস। প্রতিষ্ঠানটি বলছে- প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দফতর ড. ইউনূসের এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। এটি প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়ার খবরটিকে ‘প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ইসরায়েলি একজন ভাস্করের দেওয়া পুরস্কার ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতারণামূলকভাবে ইউনেস্কোর পুরস্কার বলে প্রচারণা চালিয়েছেন। বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছুক্ষণ আগে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেটি হলো- ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে ইউনেস্কোর একটি পুরস্কার দিয়েছে বলে প্রচারিত হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে যখন ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছি, সেখান থেকে তারা নিশ্চিত করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা দেওয়া হয়নি।তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি সম্মেলনে গজনবি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থার আমন্ত্রণে যান। সেখানে ইসরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী (নাম স্পষ্ট না) তাকে ‘ট্রি অব পিস’ নামক একটি সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসরাইলি ভাস্কর্য শিল্পীও নিশ্চিত করেছেন এটি ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার নয়। এটি গজনবি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা ইউনেস্কোর কাছে একটি ব্যাখ্যা পাঠাবো ইউনূস সেন্টার এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে যে সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে, সেটি প্রতারণামূলক এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেটা সাধারণের মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। ইউনেস্কো কর্তৃক পুরস্কারের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে ইউনেস্কো প্রদত্ত পুরস্কার বলে সেখানে লেখা রয়েছে। ড. ইউনূস ইউনেস্কোর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন যেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। আমরা ইনোসেন্টারকে অনুরোধ জানাবো এই ধরনের ভয়াবহ মিথ্যা প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনুস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‌‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরামে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোনো অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক বা সম্মাননা প্রদান করেন ইজরাইলী ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনূসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুতরাং উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক পাঠানো এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামের অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো। এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখা চাওয়া হবে।’

ইউনূস সেন্টারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, একাদশ গ্লোবাল বাকু সম্মেলনের শেষ দিনে ড. ইউনূসের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, বাকু ফোরাম একটি উচ্চপর্যায়ের মর্যাদাসম্পন্ন সম্মেলন। আজারবাইজানের বাকুতে ১৪-১৬ মার্চ একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘ফিক্সিং দ্য ফ্যাকচার্ড ওয়ার্ল্ড’। সম্মেলনের আয়োজক ছিল নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার।

সম্মেলনে বিশ্বের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাবেক-বর্তমান প্রধান, নোবেলজয়ীসহ প্রায় ৪০০ ব্যক্তি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী কৈলাস সত্যার্থী, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি। সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যেক মানুষের উদ্যোক্তাশক্তিকে বিকশিত করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্পদ কেন্দ্রীকরণের বিপরীত প্রবাহ সৃষ্টি এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কমিউনিটিগুলোকে নিজ নিজ সমস্যার সমাধানে ক্ষমতায়িত করার আহ্বান জানান।

ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার পথিকৃৎ হিসেবে এই দুটি ক্ষেত্রে নিজের বিপুল অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একটি ‘তিন শূন্য’ অর্থাৎ শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৃথিবীকে পুনর্গঠিত করতে উদ্ভাবনমূলক সমাধানসহ সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেন।

সম্মেলনকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ও জাতিসংঘের অন্যতম আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উইনি বিয়ানইমার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তাঁরা মহামারি-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবাসহ মাঠপর্যায়ের অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করেন। বাকুতে অবস্থানকালে আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী আলী আসাদভের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন ড. ইউনূস। বৈঠকে আলী আসাদভ আজারবাইজানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ড. ইউনূসের বিভিন্ন কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস আজারবাইজান স্টেট ইকোনমিক ইউনিভার্সিটিতে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের নয়নাভিরাম কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সামাজিক ব্যবসা কোর্স চালু করেছে। সামাজিক ব্যবসার ওপর বিভিন্ন কর্মশালা পরিচালনা করছে। ড. ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের সঙ্গে এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments