Saturday, April 27, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ঈদযাত্রার শুরুতেই সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপক ভোগান্তির শঙ্কা

ঈদযাত্রার শুরুতেই সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপক ভোগান্তির শঙ্কা

প্রতিবছর ঈদযাত্রার আগে ভোগান্তিতে পড়তে হয় উত্তরাঞ্চলের ঘরমুখী যাত্রীদের। এবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার সীমাহীন দুর্ভোগের শঙ্কায় আছেন যাত্রী ও চালকেরা। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে সড়কপথে যাঁরা বাড়ি ফিরবেন, তাঁদের অনেকেই পাড়ি দেবেন কয়েক শ কিলোমিটার পথ। কিন্তু ঢাকা থেকে বেরোতে এবং বেরিয়েই কয়েকটি জায়গায় থমকে যেতে পারে তাঁদের গতি।

এর জন্য দায়ী সড়কের উন্নয়নকাজ ও অব্যবস্থাপনা। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, মহাসড়ক কোথাও চার লেন, কোথাও দুই লেন। এতে চার লেনের যানবাহন দুই লেনে পড়ে আটকে যায়। আবার কোথাও কোথাও চার লেন, ওভারপাস-আন্ডারপাস ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ আর মহাসড়ক সংস্কারকাজ চলমান থাকাও যানজটের কারণ হবে।

তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দাবি, এবার আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদযাত্রায় স্বস্তি আনতে ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত চার লেন। উন্মুক্ত করা হয়েছে বিআরটি প্রকল্পের সাতটি ফ্লাইওভার। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে; যা ঈদের আগেই শেষ হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর সড়কের সংস্কারকাজ চলমান থাকলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার জামগড়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। এই সড়ক হয়ে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার যানবাহনসহ রাজধানী ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে যানবাহন চলাচল করে।

গতকাল ওই সড়ক ঘুরে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যানবাহনও থেমে ছিল সড়কের বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া পিলার স্থাপনের কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশ সরু হয়ে গেছে। এসব কারণে সড়কটিতে যানজট লেগেই ছিল।

এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের বলিভদ্র বাজার, শ্রীপুর ও চক্রবর্তী অংশে মেরামতকাজ চলমান রয়েছে। সড়কের ওই সব অংশে এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার কাছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় ওই এলাকায়ও যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারে সেতু ও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে—বলছেন যাত্রী ও চালকেরা।

এই সড়কে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক সংস্কার হচ্ছে। এক পাশ খোলা রেখে অন্য পাশে কাজ চলছে। এতে এক পাশ দিয়ে দুই দিকের গাড়ি চলতে গিয়ে অনেক যানজট লাগে। ঈদের আগে কাজ শেষ না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে।
সাভার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক হোসেন শহীদ চৌধুরীও বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর সড়কের সংস্কারকাজ চলমান থাকলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারে।’

তবে সওজ অধিদপ্তরের ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদুল্লাহ বলেন, ‘আমিনবাজার সেতু আর সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজ ঈদের আগেই শেষ হবে বলে আশা করছি।’

ভোগান্তির শঙ্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কেও  
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অত্যধিক গাড়ির চাপ, চার লেনের গাড়ি দুই লেনে প্রবেশ, এলেঙ্গায় লিংক রোডগুলোতে গাড়ি পারাপার ও দুটি রেলক্রসিংয়ের কারণে এবারও ঈদযাত্রায় উত্তরের মানুষের ভোগান্তি হতে পারে।

ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চার লেনে যানবাহনগুলো দ্রুতগতিতে আসছে এলেঙ্গা পর্যন্ত। এলেঙ্গায় এসেই দুই লেনে প্রবেশের সময় গতি কমাতে হচ্ছে। এতে করে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। এভাবে আধা কিলোমিটার যাওয়ার পরই লিংক রোডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে।

তবে এই যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল হক খান পাভেলও দাবি করেন, ‘অতিরিক্ত চাপ সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত সেতু কর্তৃপক্ষ।’

বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এবং হাটিকুমরুল থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত সড়কের খানাখন্দ সংস্কার করা হয়েছে।
পাঁচলিয়া ওভারব্রিজের কাজ শেষের দিকে। ঈদের আগে খুলে দিলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।

সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-৩) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে পুরো সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। আশা করি, এবার ঈদে উত্তরবঙ্গবাসীদের কোনো শঙ্কায় পড়তে হবে না।’

রংপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের চালক আমজাদ হোসেন, একতা পরিবহনের চালক সাব্বির জানান, মহাসড়কের দক্ষিণে চান্দাইকোনা থেকে উত্তরে রহবল পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি স্থানে এবার যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বগুড়া অংশে যানজট হতে পারে পুলিশই এমন আটটি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো শেরপুরের চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার, শেরপুরের ধুনট মোড়, শাজাহানপুরের লিচুতলা বাইপাস ও বনানী মোড়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে, বগুড়া শহরতলির চারমাথা বাস টার্মিনাল, মাটিডালী এবং শিবগঞ্জের মোকামতলা বন্দর।

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এসব পয়েন্টে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
তবে সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, যানজট হয় এমন স্থানগুলোতে ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাস চালু হয়েছে। মহাসড়কের যেসব পয়েন্টে উন্নয়নকাজ চলছে, সেই স্থানগুলোতে যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক করা হয়েছে। এবার যানজটের শঙ্কা নেই।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments