মধ্যরাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিবির ও জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে শিক্ষার্থীদের একাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘২০২৩ সালের জুলাই মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের নামে এখনো কোর্টে মামলা চলমান এবং সবাই জামিনে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী মৌলবাদের বিরুদ্ধে `Rise above Fundamentalism’ ব্যানারে মানববন্ধন করি।’
‘এই মানববন্ধন করার দরুনে আমাদের চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং জবাবদিহি চাওয়া হয়। বিভিন্ন হলের রুমে রুমে রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ডেকে জবাবদিহি চায় এবং প্রায় ৭০-৮০ জন মিলে দুজনকে ডেকে একটি কালচারাল র্যাগিংয়ের দৃষ্টান্ত রাখে সবার সামনে। এছাড়া একটি গোষ্ঠীর ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের নিয়ে মিথ্যাচার করে।’
‘এমনকি মানববন্ধনকে একটি অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের পক্ষে কেউ নিজের কোনো মতামত রাখতে গেলে তাকেও বুলিং এবং নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয়।
আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক কিংবা পরিচয় ছিল বিধায় অনেককেই কটাক্ষের শিকার হতে হয়। আহসানউল্লাহ হলের নর্থের আবাসিক ছাত্র হওয়ার জন্যও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, যা বুয়েটের একমাত্র মাইনরিটি রেসিডেন্স। এরপর থেকে যে কারোরই পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে (বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেই) পরিচিতি থাকলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। এমনকি অনলাইন ও অফলাইনে পরিবার নিয়েও অশালীন মন্তব্য করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পালনের উদ্দেশ্যে অনলাইন/আইটি রিলেটেড কাজে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দক্ষ শক্তি তৈরির প্রতিজ্ঞায় `Road To Smart Bangladesh’ নামক অনুষ্ঠানে আমাদের কয়েকজন উপস্থিত হন, যেটি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠিত হয়ে। এটাকেও ইস্যু করে সেই প্রোগ্রামের নিউজ কাটিং থেকে আমাদের ছবি বের করে, আমাদের চিহ্নিত করে আবারও একটি গোষ্ঠীর দ্বারা সংগঠিত কথিত বিচারকার্যের নাম করে বিভিন্ন রকমের জবাবদিহি চাওয়া হয়। এরপর আমাদের বিভিন্নভাবে ফলো করা হয় সব জায়গায়, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার মতো।’
তারা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়ে আছে যে আমরা যারা ভিকটিম, যা কিছুই করতে যাই, একটি গোষ্ঠীর কাছে সেটির জবাবদিহি করতে হচ্ছে। একদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব ও বড় ভাই-ছোট ভাই মিলে ক্যাফেটেরিয়াতে কাচ্চি রান্না করে খাই। এটাকেও মিথ্যাচার করে রাজনৈতিক তকমা লাগানো হয় এবং বলা হয় গোপনে সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। যেটি পুরোপুরি বানোয়াট এবং মিথ্যা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করে সব রকমের গ্রুপ ও ক্লাব থেকে শিক্ষকদের কোনো অনুমতি না নিয়ে বের করে দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের স্ট্যাডি ম্যাটারিয়েলস দেওয়া বন্ধ করা হয়, ডিপার্টমেন্ট, হল, ক্লাবের প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেওয়া, ভালো খেলা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্টে খেলতে বাধা, ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ হওয়াসহ সব জায়গায় যেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আমাদের জবাবদিহিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল আমরা ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করিনি এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই, তবে আদর্শের দিক থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে আছি। এরপরও বলা হয়, যদি কেউ ভবিষ্যতেও এই চেতনায় বিশ্বাস করে এমন পাওয়া যায়, তাকেও বের করে দেওয়া হবে এবং আমাদের র্যাগার, খুনি, মাদকাসক্তসহ আরও অনেক ন্যাক্কারজনক অপবাদ দেওয়া হয়।’