Monday, May 20, 2024
spot_img
Homeজাতীয়মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদন: বাংলাদেশে বিনিয়োগে বড় বাধা ঘুষ-দুর্নীতি

মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদন: বাংলাদেশে বিনিয়োগে বড় বাধা ঘুষ-দুর্নীতি

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি, শ্রম পরিবেশ, স্বচ্ছতার ঘাটতিসহ বেশ কিছু বাধা দেখছে মার্কিন সংস্থা অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর)। সংস্থাটি বলছে, কিছু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার কিছু আইন নিজেই বিনিয়োগে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘দ্য ২০২৪ ন্যাশনাল ট্রেড এস্টিমেট রিপোর্ট অন ফরেইন ট্রেড ব্যারিয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউএসটিআর প্রকাশিত এটি ৩৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন। এতে ৫৩টি দেশ, ৩টি জোট ও ২টি অঞ্চলে মার্কিন তথা বিদেশি বিনিয়োগে বাধার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইউএসটিআর মার্কিন বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী কার্যালয়ের একটি অংশ এটি। মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যবিষয়ক মুখ্য উপদেষ্টা, আলোচক ও মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেন। বর্তমানে সংস্থাটির প্রধান ক্যাথেরিন সি টাই।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিই এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার প্রধান উপকরণ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাধাগুলোর শুরুতেই সরকারি কেনা-কাটায় দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার ঘাটতিকে দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০০৬ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের আওতায় বাংলাদেশে সরকারি কেনাকাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মূলনীতি মেনে চলার কথা বললেও বাংলাদেশে দুর্নীতি খুব সাধারণ বিষয়। সরকার ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট পোর্টাল চালু করলেও মার্কিন অংশীজনেরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, পোর্টালে মেয়াদোত্তীর্ণ কারিগরি বিষয় রয়ে গেছে। পছন্দের আবেদনকারীকে দরপত্র পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সার্বিকভাবে সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু কোম্পানি অভিযোগ করেছে, তাদের বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রায়ই নিজেদের স্থানীয় অংশীদারদের মাধ্যমে বাংলাদেশে দরপত্র প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের সুরক্ষার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ ধরনের সম্পদের সুরক্ষায় আইন সংস্কার করেছে। কিন্তু এসব পরিবর্তনের কার্যকারিতা কতটুকু, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে সব জায়গায় নকল ও চুরি করা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা সেবা খুব সহজেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্য, পোশাক, ওষুধ ও সফটওয়্যার শিল্পে এ ধরনের লঙ্ঘন বেশি দেখা গেছে বলে মার্কিন অংশীজনেরা অভিযোগ করেছেন।

আইনি বাধার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করা হয়। এ ধরনের আইন সরকারকে যেকোনো কম্পিউটারে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা দিয়েছে। এমনকি তথ্যের অবাধ প্রবাহ, ভয়েস কল কিংবা অনলাইন যোগাযোগও বাধাগ্রস্ত করতে পারে সরকার। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোকে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দিতে বলেছিল। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আইনটি পাস হলে বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে যেকোনো বাংলাদেশি বা তার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা পাবে সরকার।

বিনিয়োগের বাধা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অন্য বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে মুনাফা, লভ্যাংশ ও অন্যান্য পুঁজি বের করার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকে, প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। কোনো কোনো কোম্পানিকে অনুমোদনের জন্য এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

ইউএসটিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষিতে ভর্তুকি দিলেও ২০১১ সালের পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানায়নি। রপ্তানি খাতকে করছাড়ও দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, অগ্নিনিরাপত্তা ও ভবন নিরাপত্তা, সভা-সমাবেশের অধিকারসহ শ্রম অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালে জিএসপির আওতায় বাংলাদেশের সব ধরনের শুল্কছাড় স্থগিত করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জিএসপির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হয়নি বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাধাগুলোর মধ্যে জোরের সঙ্গে ঘুষ ও দুর্নীতিকে একাধিকবার দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্নীতি দমন আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। মার্কিন কোম্পানিগুলো অভিযোগ করেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ নেওয়ার প্রবণতার কারণে বাংলাদেশে দরপত্রে অংশগ্রহণ ও লাইসেন্স পাওয়া কঠিন। দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) দিনে দিনে দুর্বল করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আগে দুদককে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনায় দুদকের ক্ষমতাও সীমিত করা হয়েছে ওই আইনে।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments