দেশের সর্বোচ্চ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। দেশের মোট পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় উত্তরের এই জেলায়। পেঁয়াজের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এ বছরে ফলন ভালো হলেও ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় চাষিদের মুখে হাসি নেই। কারণ মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজ ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি করা হয়েছে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আর এখন সেই পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক ভারত থেকে আমদানিকৃত ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজের প্রথম চালান ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল ৬টার দিকে পেঁয়াজের এই চালানটি সিরাজগঞ্জে এসে পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এরপর থেকেই মূলত পাবনা সদর, সুজানগর ও সাঁথিয়ার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে।
কৃষকরা বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ কমিয়ে দিলেও পাইকাররা বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছেন না। তাদের দাবি- ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বড় বড় মোকামগুলোও দেশি পেঁয়াজের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে একজন পাইকার ৩০০ মণ পেঁয়াজ কিনতেন, সেখানে আজকে ১০ থেকে ১৫ মণ কিনেছেন।
কৃষকরা বলেন, ভরা মৌসুমে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় আমরা চরমভাবে হতাশার মধ্যে আছি। বর্তমানে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সেজন্য আজকে বাজারে তেমন পেঁয়াজ আনা হয়নি। ঈদের কেনাকাটার জন্য কিছু পেঁয়াজ বাজারে আনা হয়েছে। ২০ দিন আগেও পেঁয়াজ ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও দেশে পেঁয়াজের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অজুহাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছে। আর সেজন্য কৃষকরাও বাজারে পেঁয়াজ আনছেন না।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর একটি হচ্ছে মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ। অপরটি মৌসুমী পেঁয়াজ বা হালিকাটা পেঁয়াজ নামে পরিচিত। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে মৌসুমী হালিকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল ) সকালে পাবনার হাজিরহাটে ঘুরে দেখা গেছে বাজারে তেমন পেঁয়াজের আমদানি নেই। কৃষকদের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসছে। ভালো মানের পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। গত ২৫ দিন আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।