Thursday, May 9, 2024
spot_img
Homeস্বাস্থ্যপ্রধানমন্ত্রী দেশেই চোখ দেখান, আর এমপিরা সিঙ্গাপুরে চলে যান

প্রধানমন্ত্রী দেশেই চোখ দেখান, আর এমপিরা সিঙ্গাপুরে চলে যান

দেশের চিকিৎসা সেবায় সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় চোখ দেখাতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যান। আর আমাদের এমপিরা সামান্য কিছু হলেই সিঙ্গাপুর চলে যান। এভাবে তো দেশের চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা আসবে না। তাদের চিকিৎসা নিতে হবে নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালগুলোতে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে বাংলাদেশ স্মার্ট ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নেটওয়ার্ক (বাসূন) আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের এমপিরা যদি তাদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত যান এবং চিকিৎসা নেন, তাহলে দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অবশ্যই ফিরে আসবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে তো এখন বাইরে থেকেও রোগী আসে। নেপাল-ভুটান থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। কিছুদিন আগেও ভুটান থেকে এক রোগী বার্ন ইনস্টিটিউটে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। নেপাল ও মালদ্বীপ আমাদেরকে এসে রিকোয়েস্ট করে, আমরা যেন আমাদের স্বাস্থ্য সেবাটা তাদের প্রতি বাড়িয়ে দিতে পারি। তার মানে আমাদের চিকিৎসকদের মেধা অন্যদের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। আমরা চাইলেই স্বাস্থ্যসেবায় ভালো কিছু করতে পারি।

তিনি বলেন, হঠাৎ করেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর মনে হয়েছিল যে, আমি এক মহাসমুদ্রে পড়ে গিয়েছি। এখান থেকে উঠে দাঁড়ানো আমার পক্ষে অনেকটাই কঠিন। তবে, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আপনাদের সহযোগিতামূলক নানা কর্মকাণ্ডে এখন আমার মনে হচ্ছে, এই মহাসমুদ্র থেকেও আমি উঠে দাঁড়াতে পারব। আমার বিশ্বাস আমরা সবাই মিলে যদি একসাথে কাজ করি, বিরাট এই সাগর থেকে আমরা উঠতে পারব এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আশা নিয়ে আমাদের দুইজনকে (মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বসিয়েছেন। আমরা যদি ফেইল করি, তাহলে আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। তাই আমাদেরকে পাস করতেই হবে। জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

সামন্ত লাল সেন বলেন, চিকিৎসকদের নানা ঘটনা আমার কানে সবসময় আসে। সিলেটের একটি উপজেলায় আমার এক চিকিৎসক ভাই তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল কোয়ার্টারে বসে টিভি দেখছিল, এরপর হঠাৎ করেই ছাদ ভেঙে তার মাথার ওপর পড়ে। এখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? সবাই যে বলে আমার চিকিৎসকরা গ্রামে থাকে না, গ্রামে থাকার জন্য তাদেরকে আমরা কী ব্যবস্থা করে দিয়েছি, সেটি কিন্তু আলোচনায় আসে না। তাদের তো একটা থাকার ভালো ব্যবস্থা করে দিতে হবে, তাহলেই তো সে গ্রামে গিয়ে থাকবে। মন্ত্রী হিসেবে আমাকে যেমন চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে হবে, রোগীদের চিকিৎসাও নিশ্চিত করতে হবে। আমাকে এই দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

দক্ষ চিকিৎসক ও শিক্ষকের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাইনোকোলজিতে এতো পরিমাণ মানুষ, তাদের প্রমোশন দেওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু বেসিক সাবজেক্টে আমাদের লোক নেই, অ্যানেস্থিসিওলোজিতে আমাদের পর্যাপ্ত লোক নেই। কিন্তু অভাব নেই শুধু গাইনোকোলজিতে। তাই আমাদেরকে এভাবে চলতে থাকলে হবে না। যে বিষয়গুলোতে আমার সংকট রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

সবাই মিলে কাজ করলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিবর্তন হবে 

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমি আশাবাদী। আমাদের সমস্যা আছে, সমস্যা থাকবেই। তবে সেই সমস্যাও আমরা সমাধান করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন, তার স্বপ্নগুলোকে যদি আমরা বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য খাত পাল্টে যাবে।

তিনি বলেন, দেশে এখন সব ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে। বিএসএমএমইউয়ে কিডনি, লিভার ও হার্ট প্রতিস্থাপন হচ্ছে। রোগীদের আর এখন চিকিৎসার জন্য বাইরে চলে যেতে হয় না। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিবর্তন হবে, দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্য নিয়ে থাকবে।

এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন-সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।

সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার এত বছরেও আমাদের স্বাস্থ্যসেবা এখনো অর্গানাইজড হয়নি। যে কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে আমরা খুব বেশি বেনিফিট পাচ্ছি না। বরং আমরা দেখছি স্বাস্থ্যসেবায় এক ধরনের দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। আর এসবের ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। এদিকে এসবের দায় এসে পুরো বর্তাচ্ছে চিকিৎসকদের ওপর।

কর্মশালার সঞ্চালনা করেন এমিনেন্সের প্রধান নির্বাহী ডা. শামীম হায়দার তালুকদার। কর্মশালায় একাধিক সংসদ সদস্য, বিএসএমএমইউয়ের বর্তমান ও তিনজন সাবেক উপাচার্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান ও সাবেক তিন মহাপরিচালকসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে বাংলাদেশ স্মার্ট ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নেটওয়ার্ক নামে নতুন একটি নাগরিক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের নেতৃত্বে সংগঠনটিতে রয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন জনস্বাস্থ্যবিদ, চিকিৎসক ও জাতীয় সংসদের একাধিক সংসদ সদস্য।

জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সভায় অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের সভাপতিত্বে পাঁচজন সংসদ সদস্য, বিএসএমএমইউয়ের বর্তমান ও তিনজন সাবেক উপাচার্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক তিন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments