Sunday, April 28, 2024
spot_img
Homeবিশ্বহংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন পাস, পশ্চিমাদের কড়া সমালোচনা

হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন পাস, পশ্চিমাদের কড়া সমালোচনা

আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে ‘আর্টিকেল ২৩’ বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইন পাস করল হংকংয়ের চীনপন্থী কর্তৃপক্ষ। নতুন এই আইন নাগরিক স্বাধীনতাকে আরও ক্ষুণ্ণ করতে পারে বলে সমালোচকদের আশঙ্কা। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো আইনের কড়া সমালোচনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এই আইন পাসের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়। ইতিমধ্য়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও তাইওয়ান হংকং ভ্রমণে নাগরকিদের সতর্ক করেছে। পাশাপাশি হংকংয়ে চলাফেরাও সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘আইনটি হংকংয়ের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলে দেবে।’

আইনটি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, এটি মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার পাশাপাশি বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। এই আইনের কারণে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের সুনাম নষ্ট হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, ‘এর ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করলেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক করে রাখতে পারবে এবং আইনজীবীর সঙ্গেও দেখা করতে দেবে না।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার রাতে হংকংয়ের বেইজিংপন্থী আইনসভায় আর্টিকেল ২৩ আইনটি পাস হয়। নিছক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই খুব দ্রুত আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি বলেন, ‘এক ঐতিহাসিক যাত্রার শেষ হলো। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের (চীন) বিশ্বাস অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।’

ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্ভুক্ত হংকং শহরটিকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’-নীতিতে উচ্চতর স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা রক্ষার শর্তে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন একটি ছোট সংবিধানও দিয়েছিল যুক্তরাজ্য।

সেই সংবিধানের বাধ্যবাধকতা পূরণের ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব’ পালনের স্বার্থেই নতুন আইনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জন লির দাবি।

লি আরও জানান, ‘কালো-পোশাকে নাশকতা’ প্রতিরোধে আইনটি অনেক দরকার। বেইজিংয়ের আধিপত্য থেকে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ২০১৯ সালের লাখো মানুষের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে তিনি একথা বলেন।

২০০৩ সালে প্রথম আর্টিকেল ২৩ পাসের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আন্দোলনের মুখে আইন কার্যকর করা যায়নি। তবে এবার কড়া নিরাপত্তার কারণে আইন পাশের পর তেমন জোরাল বিক্ষোভ দেখা যায়নি।

নতুন আইনে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ শাস্তি ঔপনিবেশিক কালের চেয়েও কঠোর করা হয়েছে। এমনকি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধিতাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরূপ অভ্যুত্থানসহ আইনের অধীনে যেকোনো অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতার জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বিধান করা হয়েছে।

আইনের সম্পূরক বিধি অনুযায়ী হংকংয়ের নেতা লিকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বাড়াতে পারবেন। তাছাড়া বিদেশে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের পাসপোর্ট বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পাশাপাশি শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মামলা ছাড়া পুলিশ আগে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা আটক রাখতে পারতো। কিন্তু এখন সেই সময় ১৬ দিন করা হয়েছে। এমনকি আটক ব্যক্তিকে আইনজীবী বা অন্য কারো সাথে দেখা করা থেকেও বিরত রাখতে পারে পুলিশ।

নতুন আইনের আওতায় এ পর্যন্ত ২৭৪ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ। এছাড়া ৫টি কোম্পানির বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments