নামাজের পর ইসলামের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত। এ দুটি ইসলামের প্রধান স্তম্ভ। এটা বিধ্বস্ত হয়ে গেলে ইসলামের প্রাসাদও ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে একত্র হয়ে রুকু করো– সুরা বাকারা ৪৩। জাকাত ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অনন্য বৃত্তি। জাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। জাকাত মানে ধনীদের ধন-মালে আল্লাহর নির্ধারিত অবশ্য প্রদেয় অংশ– সুরা জারিয়াত ১৯। আল্লাহপাক বিশ্বনবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ধনীদের সম্পদ থেকে জাকাত উসুল করে তাদেরকে পবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন করে দাও– সুরা তাওবা ১০৩। এর পর বলা হয়েছে, আল্লাহ সম্পদশালীদের সম্পদ থেকে জাকাত সংগ্রহ করে নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয় বণ্টনের জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন– সুরা তওবা ৬০। বস্তুত জাকাত জাকাতদাতার মন ও আত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে, তার ধন-সম্পদকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে। ইমানদার ব্যক্তি জাকাত প্রদানের মাধ্যমে অবৈধ আয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
জাকাত অনাদায়ী ব্যক্তির সম্পদ অপবিত্র। আর অপবিত্র থাকার ফলে আল্লাহর দরবারে অন্যান্য ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে সম্পদের সঙ্গে জাকাতের (সম্পদ ও টাকা-পয়সা) সংমিশ্রণ ঘটে, তা সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়– বুখারি। যিনি জাকাত দেবেন, তার জন্য নিয়ত করা ফরজ, হিসাব করে জাকাত দেওয়াও ফরজ। হিসাব না করে যদি জাকাত দেন তাহলে নফল সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য আমাদের হিসাব করে তারপর জাকাত দিতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জাকাতের নামে এক শ্রেণির ধনী লুঙ্গি ও শাড়ি দেয়। অথচ জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি বলতে ইসলামে কিছু নেই। সে জন্য যারা বিত্তবান, যাদের জাকাত ফরজ হয়েছে, সরাসরি টাকা দিতে হবে। তাহলেই ওই ব্যক্তি, মানে গরিব তার প্রয়োজনমতো খরচ করতে পারবে। জাকাত আমরা সব সময় দিতে পারি। কিন্তু রমজানুল মোবারকে বেশি সওয়াব পাওয়ার প্রত্যাশায় আমরা অনেকেই রমজানে জাকাত দিয়ে থাকি।
জাকাত না দেওয়ার শাস্তি ভয়ানক। যারা স্বর্ণ, রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা থেকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও। এর পর আল্লাহ বলেন, সেই দিনের আজাবের কথা জানিয়ে দাও, যেদিন স্বর্ণ, রৌপ্য আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের ললাট, পাঁজর ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে যে, এটাই হচ্ছে তোমাদের নিজেদের জন্য সঞ্চিত সেই ধনসম্পদ, যা তোমরা সঞ্চয় করেছিলে। এখন স্বাদ গ্রহণ করো– সুরা তওবা ৩৪-৩৫। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুতালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধনসম্পদ পেয়েছে কিন্তু জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন ওই ধনসম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে, যার মাথার ওপর থাকবে কালো দুটি দাগ এবং সাপ ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ ওই ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুই গালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে– আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। বুখারি, নাসায়ি। তাই এই মাহে রমজানে সবাইকে জাকাত প্রদানে এগিয়ে আসা দরকার।
মাওলানা বরকত উল্লাহ: খতিব বাইতুন নূর জামে মসজিদ, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা